পুবের কলম প্রতিবেদকঃ হিজাব ও নামাবলি বিতর্কের জেরে স্কুলের মধ্যে অশান্তিতে জড়িয়ে পড়েছিল একদল পড়ুয়া। দিনদশেক আগের এই ঘটনায় মাঝপথে থমকে গিয়েছিল হাওড়ার ধূলাগড়ি আদর্শ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। অশান্তির মাঝে পড়ে স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মাফুজা সেখ আহত হয়েছিল।
পুলিশের লাঠি পড়েছিল তার গায়ে, এমনটা অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার দিন দ্বাদশ শ্রেণির একটি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। অশান্তির কারণে সেই পরীক্ষা মাঝপথেই থমকে যায়। প্রশাসনের নির্দেশে চারদিন স্কুল বন্ধ থাকে। সোমবার থেকে পুনরায় খুলেছে স্কুল। অশান্তির জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাকি পরীক্ষাও শেষ হয়েছে। পড়ুয়ারা বিদ্যালয়ে এসে বাকি পরীক্ষায় বসলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা দিতে স্কুলে যেতে পারেনি মাফুজা।
২২ নভেম্বরের ঘটনার রেশ আজও মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি মাফুজা। ঘটনার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছি’। এখনও তার চলাফেরায় সমস্যা রয়েছে। তাই স্কুলে গিয়ে দর্শন ও ইতিহাসের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। যদিও মাফুজার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে পাশে দাঁড়িয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। টেস্টের দু’টি পত্রে পরীক্ষা দিতে না পারার কারণে তার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে কোনও অসুবিধা হবে না বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।ধূলাগড়ির একটি সভাগৃহে স্কুলের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি মিটিং হয় মঙ্গলবার। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন, সাঁকরাইলের বিধায়িকা প্রিয়া পাল থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশাসনের লোকজন। সেখানে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার বার্তা দেওয়া হয়।
বিধায়ক প্রিয়া পাল জানিয়েছেন, ‘সভায় আমরা উভয়পক্ষকে বুঝিয়েছি। স্কুলের পড়ুয়ারা কী পোশাক পরবে, তার একটা সরকারি নির্দেশ রয়েছে। এখানে কোনও জটিলতা নেই। সরকারি নির্দেশিত পোশাক পরে আসার কথাই বলা হয়েছে সকলকে।’ তবে জানা গেছে, মুসলিম মেয়েদের যারা স্কুল ইউনিফর্মের সঙ্গে মাথায় কাপড় দিয়ে এবং হিজাব পরে স্কুলে আসত, তাদের কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তারা ইউনিফর্মের সঙ্গে মাথায় কাপড় দিয়েই ক্লাস করছে। কিন্তু বিধায়ক প্রিয়া পাল ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বার বার বলে চলেছেন, সরকারি নির্দেশিকা মানতে হবে। সরকারি নির্দেশিকায় মুসলিম মেয়েদের কর্নাটকের মতো হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি না তা কিন্তু খুলে বলা হচ্ছে না।
সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবাংলায় মুসলিম মেয়েরা বামফ্রন্ট আমলে শিক্ষায় সবথেকে পিছিয়ে ছিল। ধীরে ধীরে সে অবস্থার এখন পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি গৈরিক মনোভাবাসম্পন্ন কিছু ব্যক্তি ছাত্রছাত্রীদের উসকানি দিচ্ছে যে, মুসলিম মেয়েদের মাথায় কাপড় দেওয়ায় বাধা দিতে হবে। আর ধূলাগড়িতে এই প্রেক্ষিতেই কিছুটা অশান্তি হয়েছে। তবে এখনকার হি¨ু-মুসলিম সবসময় মিলে মিশেই থাকে। বাইরের লোকদের উসকানিতে এই ধরনের একটি নয়া উদ্ভূত সমস্যা তৈরি করা হয়। ছাত্রীরা অবশ্য স্কুল ইউনিফর্মের রংয়ের ওড়না ব্যবহার করছে। আর তা দিয়ে কেউ কেউ মাথাও আবৃত করছে। এখন দেখার, গৈরিক বাহিনীর প্ররোচনায় মুসলিম মেয়েদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ ও পরিবেশ ব্যাহত হয় কি না?