পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ফেসবুকের একাধিক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে এই সত্য উঠে এসেছে যে– ভারতে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই মুসলিম বিরোধী এবং সংখ্যালঘু বিরোধী পোস্ট এই সামাজিক মাধ্যমে বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্বেষমূলক ভাষণের ভিডিয়ো পোস্ট করার প্রবণতাও।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ফেসবুকের এমন এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছিল– ভারতে মুসলিমদের জড়িয়ে মিথ্যে কথা প্রচার করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়ানোই এই ধরনের পোস্ট করার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে। এইসব বিষয় ফেসবুকের বিদ্রোহী পদত্যাগী অফিসার ফ্রান্সিস হগেনের কাছ থেকে সারা বিশ্ব জেনেছে।
নতুনভাবে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে– অসমে ভোটের মুখে তখন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সাকরেদদের দিয়ে একথা প্রচার করেছিলেন যে– অসমিয়াদের হার্ট– লিভার এবং কিডনি চিরকালের জন্য নষ্ট করে দিতে মুসলিম চাষিরা বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে চাষ করছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদক এই বিষয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তকে প্রশ্ন করতে তিনি বলেন– এমন কথা তিনি এই প্রথম শুনছেন।
এছাড়া সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় এবং দেশজুড়ে লকডাউন জারি হওয়ার পরও ব্যাপকভাবে মুসলিম বিরোধী পোস্ট করা হয়েছে। এমন এক ধারণা তৈরির চেষ্টা হয় যেন দিল্লিতে তবলিগ জামাতের জমায়েত থেকেই দেশে করোনা ছড়িয়েছে– পরে যা ভুল বলে প্রমাণিত হয়। ফেসবুকের যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা বিষয়টি জেনেও বন্ধ করতে পারেননি। ফেসবুকের মূল সংস্থা ‘মেটা ইনকর্পোরেট’-এর এক মুখপাত্র স্বীকার করেছেন– এই নিয়ে ফেসবুকের অফিসারদের মধ্যে দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। একদল মনে করে– ভারতে এমন পোস্ট মুছে দেওয়া উচিত। অন্য দল মনে করে তাতে ব্যবসায় ক্ষতি হবে।
অফিসারদের মধ্যকার এই দ্বন্দ্বে মালিক কখনও মাথা গলাননি। কারণ তিনি একটা জিনিসই বোঝেন, কীসে বেশি লাভ হবে। তাই তথাকথিত লাভ জিহাদ নিয়ে গোলমাল ছড়াতে ফেসবুক বড় ভূমিকা নেওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কখনও কথা বলেনি।
এইসব পোস্ট যে ভারতে স্থানীয় ভাবে দাঙ্গা ছড়াচ্ছে মাঝেমধ্যে– তাও বিলক্ষণ জানতেন কর্তৃপক্ষ। অবশ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফেসবুক কর্তারা জানিয়েছেন– তাঁরা নাকি ভারতে উত্তেজক খবর প্রতিহত করতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাঁদের দাবি– অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘হেট স্পিচ’ প্রসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য হল– এটা সারা বিশ্বেই বাড়ছে। তাঁদের দাবি– অর্ধেক হেট স্পিচ মুছে দেওয়া হয়েছে। মোটমাট ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সব বিষয়েই অবগত এবং এর পরিণতি সম্পর্কেও তাঁরা ওয়াকিবহাল। অথচ রাজনীতিবিদদের বিতর্কিত পোস্ট মুছে দিলে ফেসবুকের আকর্ষণ কমে যাবে ভেবেই তাঁরা চোখ বুজে রয়েছেন।