পুবের কলম প্রতিবেদক: সোমবার রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে কয়েকদফা দাবি নিয়ে ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল ‘অল বাংলা ডিস্ট্রিক ইমাম অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর। তবে তা ঘিরে ওয়াকফ বোর্ড ভবনে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওয়াকফের দায়িত্বশীলদের। এ নিয়ে ওয়াকফ বোর্ডের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়। বোর্ডের সিইও নিজেই বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গিয়েছে, এ দিন ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো, ইমাম সন্তানদের মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া স্কলারশিপ চালু, অনলাইন পদ্ধতি বাতিল করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের পরিচয়পত্র প্রদান-সহ একাধিক দাবিতে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাস্টিস আবদুল গণির কাছে ডেপুটেশন দিতে যান ইমামদের ওই সংগঠনের কিছু প্রতিনিধি। তার আগে স্টেস্টসম্যান হাউসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশও করে ওই সংগঠন।
অভিযোগ, সমাবেশ ও ডেপুটেশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু মানুষ ধীরে ধীরে ওয়াকফ বোর্ডের দোতলায় থাকা ‘প্রেয়ার হল’-এ জমা হতে থাকেন। এ দিন নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুক্ষণ পরে ওয়াকফ বোর্ডের অফিসে আসেন চেয়ারম্যান জাস্টিস আবদুল গণি। এরই মধ্যে ডেপুটেশন দিতে আসা কিছু ব্যক্তি ওয়াকফ বোর্ডের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও)-এর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি কয়েকজনকে ডাকেন।
সিইও আহসান আলির অভিযোগ, কয়েকজনকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তবে জোর করে ২০-২২ জন তাঁর ঘরে প্রবেশ করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভাঙচুর শুরু করেন ডেপুটেশন দিতে আসা ইমাম-মুুয়াজ্জিনদের একাংশ বলে অভিযোগ। বোর্ডের একজন কর্মী (মুহাম্মদ ইসমাইল) আহত হয়েছেন। সিইও আহসান আলি নিজেও হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে জানান।
পুবের কলম’কে তিনি জানান, হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে তিনি চেনেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ইমাম-মুয়াজ্জিন-সহ সবসময় সবার সঙ্গে সহযোগিতা করে থাকি। ডেপুটেশন গ্রহণ করতে রাজি ছিলাম, তারপরও হামলা চালানো হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে ইমাম সংগঠনের বক্তব্য, তাঁরা ডেপুটেশন দিতে এসেছিলেন, কিন্তু কিছু মানুষ ভাঙচুর করেছে। হামলাকারীদের সঙ্গে সংগঠনের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নিজামউদ্দিন বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে তাদের আমরা চিনি না।
আমাদের ডেপুটেশন কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ এটা করেছে। ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সমাজের সম্মানীয় অংশ, তবুও অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম নিজামউদ্দিন আরও বলেন, আজ ভাঙচুরের ঘটনার জন্য শেষ পর্যন্ত ডেপুটেশন দেওয়া হয়নি। আমরা রেজিস্ট্রারড পোস্টের মাধ্যমে দাবিপত্র পেশ করব।
এ দিকে ওয়াকফ বোর্ডের কর্মীরা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ঘিরে নিরাপত্তার দাবি জানাতে থাকেন। দুপুর বেলা সিইও-র ঘরে ভাঙচুরের পর থেকেই ওয়াকফ বোর্ডের সদর দরজায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দিনভর নিয়ন্ত্রিত ছিল সাধারণের যাতায়াত।
ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের নেতাদের একাংশ দাবি করছেন, বর্তমান সিইও ভালো ব্যবহার করছেন না। তার আচরণ ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অপমানের শামিল। দাবিদাওয়া নিয়ে বারবার সময় চেয়ে বা চিঠি দিয়েও কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
এ দিকে ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাস্টিস আবদুল গণি বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। অন্যান্য দিনের থেকে একটু দেরিতে অফিসে এসেছি। সব শুনলাম। আমরা প্রশাসনকে সবটা জানাচ্ছি।
এদিকে কিছু লোক বলছেন, বোর্ডের সিইও দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতেই কর্মীদের একাংশও তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।