নাজমুল সর্দার, দক্ষিণ দিনাজপুর :– মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকেও প্রথম দশে থাকার সাফল্যের ব্যাপারে জয়জয়কার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। যদিও মাধ্যমিকে একজন স্থান অর্জনকারী হিসেবে সেরার তালিকায় ছিল। কিন্ত উচ্চমাধ্যমিকে চারচারজন প্রথম দশের সেরার তালিকায় এবছর শিক্ষাক্ষেত্রে জেলার মাথা উঁচু করেছে।
এবারের মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছে চারজন। তার মধ্যে এই জেলার থেকেই দুই জন তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। বালুরঘাট ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী অনুসূয়া সাহা ও শ্রেয়সী মল্লিক। দুজনেই ৪৯৪ নম্বর পেয়েছে। এর পাশাপাশি জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা ডাংগারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪৯৩ পেয়ে রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করে চমকে দিয়েছে সৃজিতা বসাক।
অপরদিকে শতাব্দী প্রাচীন বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়এবছর মাধ্যমিকের সেরার তালিকায় থাকার পর এবার উচ্চমাধ্যমিকেও মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান অর্জন করে তাদের জেলার শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে ট্র্যাক রেকর্ড বজায় রাখল।
বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সপ্তক দাস ৪৮৯ পেয়ে অষ্টম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে এবছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে দু একটি বছর ছাড়া পূর্বের মানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হল।
এদিকে জেলায় তৃতীয় স্থান আধিকারী অনুসূয়া সাহা বালুরঘাট ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও, তার বাড়ি ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া হিলিতে।অনুশুয়া সাহার বাড়ি হিলির বাবুপাড়া এলাকায় । অনুসূয়া বাবা নাম- অজয় সাহা। পেশায় ডাক বিভাগে কর্মরত। মা ইতি সাহা আশাকর্মী।
প্রথম দশের মধ্যে মেধা তালিকার থাকার কথা থাকলেও তৃতীয় হওয়ায় ভীষণ খুশি অনুসূয়া ও তার পরিবার। সংস্কৃতে ১০০ ভূগোলে ৯৮ ইংরেজিতে ৯৯ বাংলাতে ৯৯ ফিলোসফি ৯৮ মোট ৪৯৪ পেয়ে রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। বড় হয়ে শিক্ষকতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে অনুসূয়া এবং ভবিষ্যতে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে সে। এর পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়ার কথা বলে অনুসূয়া সাহা।
অপরদিকে এবার রাজ্যের মধ্যে যুগ্ম হয়ে তৃতীয় স্থান দখল করলেন বালুরঘাট ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রী শ্রেয়া মল্লিক l জানা গেছে ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ছাত্রী আগামীর স্বপ্ন ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার। রাজ্যের মধ্যে ৪৯৪ পেয়ে তৃতীয় স্থান দখল করে শ্রেয়া ।
বালুরঘাট উত্তমাশা এলাকায় বাড়ি বাবা বালুরঘাট জজ কোর্টের সাধারণ একজন মুহুরি হিসেবে কাজ করেন। শ্রেয়ার মা জানান, আগামীতে তার মেয়ে বালুরঘাট কলেজ থেকেই তার ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা সচল না হওয়ার কারণেই বাড়ির পরিজনদের চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে।
অন্যদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ডাঙ্গারহাট হাইস্কুলের ছাত্রী সৃজিতা বসাক রাজ্যে চতুর্থ হয়েছে এবার। জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত ডাঙ্গারহাট হাইস্কুলের ছাত্রী সৃজিতা বসাক মেধা তালিকায় রাজ্যে চতুর্থ হয়ে সবাইকে তাক লাগে দিয়েছে। সৃজিতা বসাক বলেন, আমি দিনে ১০-১২ ঘন্টা লেখা পড়াশোনা করতাম। আমি খুবই নার্ভাস ফিল করছি। আমি যে রাজ্যে মেধা তালিকায় চতুর্থ হবো ভাবতেই পারিনি। এই খবর শুনে খুবই ভালো লাগছে।
আমি মাত্র ১ টা টিউশন নিয়েছিলাম, আলাদাভাবে কোনো কোচিং কিংবা টিউশন নিইনি, শুধুমাত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে ইংরেজিতে সাহায্য করতো। সে আরো জানায়, আমি ভূগোল লিয়ে পড়াশোনা করতে চাই,আর ভবিষ্যতে আমি সমাজকর্মী হতে চাই। সেইসঙ্গে আরো জানা গেছে যে, সৃজিতা বসাকের বাবার নাম- সুজিত বসাক, মায়ের নাম- সোমা বসাক,বাবা পেশায় টোটো চালক। খুবই হতদরিদ্র পরিবার, পরিবারের আর্থিকঅবস্থাও খুব একটা ভালো না। সৃজিতা বসাকের বাবা, সুজিত বসাক জানান, আমি টোটো চালিয়ে আমার মেয়েকে কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছি। তো মেয়ের এই সাফল্যে আমি খুবই খুবি। আমি চাই মেয়ে জীবনে আরো এগিয়ে যাক এবং প্রতিষ্ঠিত হোক।
অন্যদিকে বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম স্থান অর্জনকারী সপ্তক দাস জানিয়েছে স্কুল নাম উজ্জ্বল করতে পেরে সে খুশি। পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে যেমন সাফল্য পেয়েছে সে তেমনি নিট ও জিজিম এই দুই সর্বভারতীয় পরীক্ষাতেও সে সাফল্য অর্জন করেছে। এখন তার শিক্ষকদের পরামর্শে পরবর্তীতে সে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা সে জানিয়েছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় প্রায় বারো ঘন্টা ঘড়ি ধরে পড়াশোনা করেছিল সে। প্রাইভেট প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য ছিল তার বলে জানিয়েছে সে।