সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিশেষ টিম পাঠানো হয়েছে আলিয়ায়, সমস্ত বিষয় ‘তিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি টিএমসিপির নয়া ইউনিট তৈরি হবে তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
পুবের কলম প্রতিবেদক: বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে কোনও আলোচনাই করছে না তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ক্যাম্পাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব। উপরন্তু নেতৃত্ব কথা শুনছেন না। নেতৃত্বের একাংশই দুর্নীতিতে মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমন অভিযোগ জানিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সব নেতা একযোগে পদত্যাগ করলেন।
ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস এবং নিউ টাউন ক্যাম্পাসে টিএমসিপির পদাধিকারীরা যৌথ ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে।
রাজ্য সংগঠনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষক মীর সিদ্দিক-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন পদত্যাগীরা। সবটা স্বীকার করে তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্যই এটা হয়েছে। সংগঠনে কিছু রদবদল আনা হবে। পাশাপাশি সব অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মীর সিদ্দিকির বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর তৃণমূল কংগ্রেসের কমিটির মেয়াদ এমনিতেই এপ্রিল মাসে শেষ হয়ে গিয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিপত্র কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ, উঠছে তাও ভিত্তিহীন। কারণ, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তৃণাঙ্কুর বলেন, ‘এটা একেবারেই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা খুব তাড়াতাড়ি নতুন কমিটি তৈরি করব। তবে আমরা নিশ্চিত যে, আলিয়ার পড়ুয়ারা আগের মতোই টিএমসিপির সঙ্গেই রয়েছে।’’ যদিও পদত্যাগীদের দাবি, পড়ুয়ারাও ক্ষুব্ধ। নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পড়ুয়াদের স্বার্থপূরণ করতে না পেরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। তবে আমরা একটি টিম আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছি, সব অভিযোগ শুনে নয়া ইউনিট গঠন করার হবে।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস তৈরি হয়। তালতলা ক্যাম্পাসেও অ্যানেক্স বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়।
বিগত চার মাসের বেশি সময় ধরে অনেক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই। এর পরে সম্প্রতি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কেরলের অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস এম ওয়াহাবের নাম অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে প্রথম থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল থাকা টিএমসিপিতে ভাঙন।
এই পদত্যাগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউটাউন ক্যাম্পাসের টিএমসিপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াদিল আলম বলেন, ‘আলিয়া মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখানে নানা অনিয়ম চলছে। লেখাপড়া তো হচ্ছেই না, তার সঙ্গে একের পর এক দুর্নীতি হয়ে চলেছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েও কাজ না হওয়ায় আমরা ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পদত্যাগীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরিতে দুর্নীতি হয়েছে। টেন্ডার ছাড়াই একজনকে হোস্টেলের খাবারের বরাত দেওয়া হয়েছে। তিনি নিম্মমানের খাবার দিলেও পড়ুয়ারা কিছু বলতে পারছেন না। এই সবের নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মীর সিদ্দিকির হাত রয়েছে বলেও দাবি।
অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন অধ্যাপক এবং কর্মীর সঙ্গে যোগসাজশ রেখেই আদতে কলকাতা পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র এই সব দুর্নীতিতে মদত দিচ্ছেন। সিদ্দিকি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ। তেমন কিছু ছবি তাঁদের সংগ্রহে রয়েছে জানিয়ে আলিয়ার এক পড়ুয়া বলেন, ‘ মীর সিদ্দিকি দিনের পর দিন এখানে অরাজকতা করছেন। বার বার তাঁর নামে নালিশ করলেও উচ্চ নেতৃত্ব কোনও ব্যবস্থা নেননি।’
এই প্রসঙ্গে তৃণাঙ্কুর বলেন, ‘যা যা অভিযোগ রয়েছে, সব খতিয়ে দেখা হবে। সংগঠনের জন্য যেটা ভাল, সেটাই হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’