নিজস্ব প্রতিনিধি: পয়গম্বর হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপূর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষোভ চলছে। আর সেই বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে চলেছে বেশ কিছু বেসরকারি বৈদ্যুতিন মাধ্যম। সরাসরি বিভিন্ন টক শোয়ের আড়ালে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর কাজে মেতে উঠেছে বিজেপি বান্ধব বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমগুলি। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবার ওই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পথেই হাঁটল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। সোমবার রাতেই এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে, মাল্টি সার্ভিস অপারেটর (এমএসও) ও কেবল অপারেটরদের উস্কানিমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মোদি জমানায় জাতীয় স্তরের একাধিক বৈদ্যুতিন চ্যানেলের পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ হিসেবে কাজ করে চলেছে। গত বিধানসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে খুল্লামখুল্লাভাবেই বিজেপির হয়ে প্রচার করার অভিযোগও উঠেছে ওই চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে।
পয়গম্বরকে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপূর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে হাওড়ার ধূলাগড়, পাঁচলায় চলা বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাকে বড় করে দেখানোর পাশাপাশি টক শোয়ের নামে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
ফলে হাওড়ার অশান্তির ঘটনা মুর্শিদাবাদ সহ আরও কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। রাজ্য সরকার অবশ্য কঠোর হাতেই সাম্প্রদায়িক অশান্তিকে দমন করেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
কিন্তু তার পরেও লাগাতার ইন্ধন জুটিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি বান্ধব বৈদ্যুতিন চ্যানেলগুলি। আর তাদের সেই ভূমিকায় যথেষ্টই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ আধিকারিকরা।
সোমবার রাতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্যবিষয়ক দফতরের বিশেষ সচিবের স্বাক্ষরিত এক অ্যাডভাইজরিতে বলা হয়েছে, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বেশ কিছু বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশে উস্কানিমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে চলেছে। বিতর্কের নামে এমন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে যেখানে ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা হচ্ছে এবং অন্যে ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করে কেউ-কেউ বক্তব্য উপস্থাপন করছেন। সবটাই ইচ্ছাকৃতভাবে করা হচ্ছে।
এই ধরনের অনুষ্ঠানের ফলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা থাকছে। বেশ কিছু টিভি চ্যানেল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ১৯৯৫ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইনের বিভিন্ন ধারাকে লঙ্ঘন করে চলেছে।
ওই ধরনের অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকার জন্য চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি মাল্টি সার্ভিস অপারেটর ও কেবল অপারেটরদেরও বলা হচ্ছে, কোনও চ্যানেল যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিপ্রায়ে কোনও অনুষ্ঠান করে, তা যেন সম্প্রচার না করা হয়।’
নবান্ন সূত্রে খবর, মূলত টিআরপি বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এবং নিজেদের মুনাফার কথা মাথায় রেখেই বেশ কয়েকটি চ্যানেল প্রতিনিয়ত রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি কলুষিত করার চক্রান্ত করে চলেছে। যদি ওই চ্যানেলগুলি নিজেরা না শোধরায় তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পথেই হাঁটা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কোনও চেষ্টা বরদাস্ত করবে না রাজ্য সরকার।