পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ গঙ্গাসাগরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে তিনদিনের সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার এখানে এসে প্রথমে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন তিনি। মন্দিরের পুরোহিত ও আধিকারিকদের সঙ্গে মেলার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই তিনি চলে যান ভারত সেবাশ্রমে।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে কপিল মুনির আশ্রমের প্রধান জ্ঞানদাস মহান্ত কার্যত ভবিষ্যৎবাণীর সুরে বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে মমতাকে কেউ রুখতে পারবে না। তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই আমরা।’
বর্তমান সময়ে তৃণমূল যেখানে সর্বভারতীয় দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, সেখানে জ্ঞানদাস মহান্তের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন বিকেলে কপিলমুনির আশ্রম থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফের সোচ্চার হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতা বলেন, ‘এই মেলা কুম্ভ মেলার চেয়ে কোনও কম পবিত্র নয়। কথায় বলে- সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। আমরা বহুবার কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছি, এই মেলাকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। গঙ্গা সাগরের জন্য টাকা দেয় না কেন্দ্র। দ্রুত একে জাতীয় মেলা ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করি।’
মমতা বলেন, ‘এখানে মেলায় যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ দরকার। তা এখনও তৈরি হয়নি। এই ব্রিজ করে দেওয়ার জন্যও বারবার কেন্দ্রকে আবেদন করা হয়েছে। অথচ কেন্দ্রের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। আমাদের কাজ আমরাই করব। আমাদের টাকাপয়সা হলে ব্রিজটা বানিয়ে দেব।’
কপিলমুনির আশ্রম থেকে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান ভারত সেবাশ্রম সংঘে। সেখানে পুজো দিয়ে, সন্ন্যাসীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নেন তিনি।
এখান থেকেই গঙ্গাসাগরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমফান, বুলবুল, ইয়াশের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই এলাকার প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষত সারিয়ে ফের নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’
মমতা এদিন আরও বলেন, ‘গঙ্গাসাগরে আসা পূণ্যার্থীদের আগে থাকার জায়গা ছিল না, তবে এখন রাজ্য সরকারের তরফে সব রকম ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’ গঙ্গাসাগরে ২৫-৩০ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। তাই সকলকেই কোভিডবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো প্রত্যেকবারের মতো এবারেও মেলাকে ঘিরে থাকছে জোরদার প্রস্তুতি। নজরদারিতে থাকছেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। কে কী দায়িত্ব সামলাবেন ইতিমধ্যেই তার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মেলায় যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, উস্কানিমূলক কিছু না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও মেলায় যাওয়ার জন্য মানুষের সুবিধার স্বার্থে হাওড়া এবং শিয়ালদহ-নামখানা রুটে অতিরিক্ত ৭০টি ট্রেন চলবে। মেলার দিনগুলিতে চলবে সরকারি-বেসরকারি ২,২৫০টি বাস। ১০০০টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাড়ে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। থাকছে ১,০৫০টি সিসিটিভি। অগ্নিকাণ্ড রুখতে থাকছে ২৫টি ইঞ্জিন ও ১০টি অস্থায়ী ফায়ার স্টেশন। এছাড়ার করোনা মোকাবিলায় ১৩টি মেডিক্যাল স্ক্রিনিং ক্যাম্প থাকবে।
আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা