পারিজাত মোল্লা: মঙ্গলবার রাজধানী এক্সপ্রেস অপহরণে এনআইএ মামলায় ধৃত ছত্রধর মাহাতকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ সংশয় প্রকাশ করে জানায়, -‘আদৌ বিচার শেষ হবে কি?’ ২০০৯ সালে ঘটনার ১১ বছর পর ২০২০ সালে তদন্ত হাতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। এই মামলায় এখনও কয়েকজন অভিযুক্ত ফেরার রয়েছে বলে জানা গেছে ।
রাজধানী এক্সপ্রেস অপহরণের ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে তাঁর (ছত্রধর মাহাতো).নামই নিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। সেই মামলায় এখন শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন জনসাধারণ কমিটির নেতা তথা অধুনা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ছত্রধর মাহাতো।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন এই মামলায় নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে থাকে ।তারপরেই তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এনআইএ অভিযোগ করে জানায়, -‘ ধৃতদের অনেক কে ট্রায়ালে আদালতে পেশ করতেও রাজ্য পুলিশ সহযোগিতা করছে না। এখনও ফাইনাল চার্জশিট দেয়নি এনআইএ’। । তবে জামিনের শর্ত অনুযায়ী আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, -‘ দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার ঢুকতে পারবেন না ছত্রধর। সপ্তাহে একবার তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে’। ডিভিশন বেঞ্চে-‘ নির্দেশ, দ্রুত এই ট্রায়াল শেষ করতে উদ্যোগ নিতে হবে জেলা জজকে’।
আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২০২১ সালে ছত্রধর মাহাতোকে গ্রেফতার করে এনআইএ। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। রাজধানী এক্সপ্রেস ‘অপহরণ’ ও প্রবীর মাহাতোকে খুনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।এর আগে ছেলের বিয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো। গত বছর ২ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ছিল সময়সীমা। অন্তবর্তী জামিনের শেষ দিনে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো। আচমকাই বুকে ব্যথা অনুভব করেছিলেন। তাঁকে লালগড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আবারও বাড়ি ফিরে বুকে ব্যথা হলে তাঁকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।উল্লেখ্য, গত ২০০৯ সালে এই ঘটনা ঘটার ১১ বছর পর ২০২০ সালে তদন্ত হাতে নেয় এনআইএ।
এর আগে ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে তারা চার্জশিট পেশ করেছিল। ৫০ পাতার চার্জশিটে নাম ছিল মাওবাদী নেতা কিষেনজি, ছত্রধরের ভাই শশধর মাহাতো-সহ ১৩ জনের। সকলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু এই মামলায় এখনও কিছু অভিযুক্ত ফেরার।
সেই প্রেক্ষিতে ফাইনাল চার্জশিট দেয়নি এনআইএ। তাই ছত্রধর মাহাতোকে জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিশন বেঞ্চ।যদিও এই জামিন দিয়ে আদালত ছত্রধরের ওপর কিছু শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, -‘ দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় ঢুকতে পারবেন না তিনি। একই সঙ্গে, সপ্তাহে একবার তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে’।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে দিল্লি-ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ঝাড়গ্রামের কাছে অপহরণ করেছিল মাওবাদীরা। সেই মামলায় ছত্রধরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।এখন দেখার ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ পেয়ে নিম্ন আদালত এই মামলার দ্রুত বিচারদানে কি উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে?