নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলিঃ দুএকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়াই মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবেই মিটল চন্দননগরের পুরনিগমের ভোট। চন্দনগরের কর্পোরেশনের ৩৩টি আসনের মধ্যে ৩২ টিতে শনিবার ভোট গ্রহণ হয়। প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।
এদিন সকাল থেকে উৎসবের মেজাজে ভোটাররা ভোট দেন। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি অশান্তির ঘটনা ঘটে। কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বুথে সকাল থেকেই একটি ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী রেখা তেওয়ারি অভিযোগ তার বাড়ির সিসিটিভি জোর করে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ১০৮ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ হয়ে যায়। ফলে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সিটি কলেজে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন বিজেপি প্রার্থী টিয়া পাত্র বিশ্বাস।
তৃণমূল কর্মীরা বুথে ঢুকে রিগিং করছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হন বাম প্রার্থী গীতা দাস। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি বলে তার অভিযোগ। যদিও তার দাবি নস্যাৎ করে তৃণমূল প্রার্থী শুভ্রা দাসের পাল্টা অভিযোগ বিজেপি প্রার্থী গন্ডগোল পাকানোর জন্য অশান্তির পরিবেশ তৈরী করছেন। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে চলে বলে তার দাবি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিন্দুবাসিনী পাড়ার ৩১ ও ৩২ নম্বর বুথের তৃণমূল বিজেপি ও নির্দল প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন। উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি বিদিত রাজ বুন্দসে।
পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে। অন্যদিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ নম্বর বুথে ইভিএমে কালি লাগানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি ২৭ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীদের মারধর করার অভিযোগ তুলে চন্দননগর মহকুমা শাসকের দপ্তরে সামনে ধর্নায় বসে পড়েন বিজেপির নেতাকর্মীরা।
ভোট নিযেü অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ থাকলেও আবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেল চন্দননগর কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। ভোট পরিচালনার ফাঁকে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মুন্না আগরওয়াল ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অরূপ দাস একসঙ্গে খোশমেজাজে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন।
চা খেতে খেতে মুন্না আগরওয়াল বলেন, ভোট একদিনের ব্যাপার। তারপর সারা বছর তারা এলাকায় থাকবেন। তাই কোনও মারামারিও নয় কোন অশান্তি নয়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে পরম্পরা জুড়ে চন্দননগরে একটা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। তা আজও বজায় রয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী বাম প্রার্থী অরূপ দাস বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকে ভোট করছেন, ভোট দেখছেন। আজও পর্যন্ত এখানে কোনও গণ্ডগোল হযüনি। তারা একই ক্লাবের ছেলে। মুন্না তাকে দাদা বলে। হয় ওকে, নয়তো আমাকে। একজন জিতবে একজন হারবে। তাতে কি এসে যায়। তারা মারামারি, হানাহানি পছন্দ করেন না। ভোট তো একদিনের। পরের দিন থেকে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। গণতন্ত্রে বিরোধীপক্ষ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন অরূপ দাস।
যুযুধান দু’পক্ষের প্রার্থীদের এই সৌহার্দের মনোভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচন ঘিরে হানাহানিতে আর মেতে উঠবে না রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।