পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: না শুধু মৌখিক নয়, একেবারে হাতেনাতে মিলছে গরমাগরম সার্টিফিকেট। তাও যে-সে সার্টিফিকেট নয়, একেবারে ‘পাপমুক্তির সার্টিফিকেট’। দক্ষিণ রাজস্থানের একটি মন্দির কর্তৃপক্ষ নাকি তাদের ভক্তদের এমনই সার্টিফিকেট দিচ্ছে। আর এই খবর সামনে আসতেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাদের মন্দির সংলগ্ন যে ‘কুন্ড’ রয়েছে তাতে ডুব দিলে মানুষ ‘পাপমুক্ত’ হয়। আর তাই কুন্ডতে ডুব দেওয়া ভক্তদের তারা ‘পাপমুক্তি’র সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। তবে, ফ্রিতে এই সার্টিফিকেট মিলবে না, এজন্য ১২টাকা ‘দক্ষিণা’ দিতে হবে। তারপরেই হাতে পাওয়া যাবে সার্টিফিকেট।
জয়পুর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ রাজস্থানের প্রতাপগড় জেলার গোতামেশ্বর মহাদেব মন্দির। এই মন্দির কর্তৃপক্ষই ‘পাপমুক্তর’ সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। মন্দিরটি আবার রাজস্থান সরকারের ‘দেবস্থান’ বিভাগের অন্তর্গত। শংসাপত্রটি দিয়ে থাকে মন্দির ট্রাস্ট কমিটি। মন্দিরের ‘মন্দাকিনী কুন্ডে’ ডুব দেওয়ার জন্য বছরে প্রায় ২৫০-৩০০টি শংসাপত্র দিয়ে থাকে মন্দিরের সংশ্লিষ্ট ট্রাস্ট।
কবে থেকে এই নিয়ম চালু হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ পাওয়া না গেলেও যারা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রাণী হত্যার ‘পাপ’ করেছেন বা যাদের জাত বা সম্প্রদায়ের দ্বারা বয়কট করা হয়েছে তারা এই কুন্ডে ডুব দিয়ে শংসাপত্র পেতে চায় বলে মন্দির সূত্রে খবর। সেক্ষেত্রে শংসাপত্রগুলি ‘প্রমাণ’ হিসেবে কাজ করে যে, তাদের মাথায় আর কোনও ‘পাপের বোঝা’ নেই, তাই তাদের আর সামাজকি বয়কেটর মুখে পড়তে হবে না।
ঠিক কি লেখা হয় শংসাপত্রের বয়ানে? সেখানে লেখা থাকে—‘‘গ্রামের পঞ্চায়েতগুলির (পঞ্চায়েতের সদস্যদের) জানা উচিত যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শ্রী গোতামেশ্বরজি’র ‘মন্দাকিনী পাপ মোচিনী গঙ্গা কুণ্ডে’ ডুব দিয়েছেন যাতে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে। তাই এই সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। দয়া করে তাকে সমাজে ফিরিয়ে নিন।’ বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় সরপঞ্চ উদয় লাল মীনা। তিনি জানান, ‘পাপ মোচিনি মন্দাকিনী কুণ্ড’-এর কাছে একটি অফিসে বসে। সেখান থেকে ১২টাকার বিনিময়ে সই-সিল সহ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘‘কথিত আছে হিন্দু ঋষি মহর্ষি গৌতম এখানে ডুব দিয়ে গরু হত্যার পাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই ধরে নেওয়া হয় এই কুণ্ডে ডুব দিলে ‘পাপ-মুক্তি’ হয়।’’ যদিও এই নিয়ে সমাজকর্মীদের অনেকে বলছেন, সমাজিক বয়কটের মতো সমাজে এই বৈষম্য তৈরি মানবতার লজ্জা। চক্ষুলজ্জার ভয়ে সমাজে ফেরার আকুতি থেকে এই সার্টিফিকেট নিতে আসছে অনেকে। মানুষের কাজই পাপ-পুণ্যের হিসাব হয়। আর সেটা ঈশ্বর করেন। তাই এই সার্টিফিকেট থাকলে মৃত্যুর পর ঈশ্বরের থেকে ‘বাড়তি নম্বর’ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।