মোল্লা জসিমউদ্দিন: বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে সন্দেশখালি মামলা। এদিন আদালত জানায়, ‘শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে বাধা নেই। রাজ্য পুলিশ, সিবিআই ও ইডি যে কেউ গ্রেফতার করতে পারবে শেখ শাহজাহানকে। তবে তদন্তে স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে।’ ৭ ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের রায় সংশোধন করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম জানিয়ে দিলেন, ‘তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ থাকলেও গ্রেফতারির উপরে কোনও স্থগিতাদেশ জারি করেনি আদালত।’ একই সঙ্গে এদিন আদালত জানিয়েছে, ‘শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে কোনও বাধা নেই। ইডি, সিবিআই বা রাজ্য পুলিশ যে কেউ গ্রেফতার করতে পারবে ফেরার এই তৃণমূল নেতাকে’।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে সন্দেশখালিতে শাহজাহানের খোঁজে গিয়ে জনতার একাংশের হাতে মার খেতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। যদিও রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নিয়ে বিশেষ সিট গঠন করে সিঙ্গেল বেঞ্চ। যা নিয়ে আপত্তি জানায় ইডি। এরপরই তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রায় দুমাসের কাছাকাছি শাহজাহান ফেরার থাকায় রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলেই রাজ্য পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতারের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি’। গত মঙ্গলবার অবশ্য ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল, ‘শাহজাহানকে গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই’। এরপরই ৭ জানুয়ারি ডিভিশন বেঞ্চের সিট গঠনের ওপর স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত নির্দেশ পরিবর্তন করতে চেয়ে এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। রাজ্যের তরফে আদালতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘শাহজাহানকে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে? সেটাও উল্লেখ করতে হবে কি না?’
আদালত সূত্রে প্রকাশ, ‘এই সময়ই প্রধান বিচারপতি রাজ্যের কাছে জানতে চান, তাহলে কি আদালত ধরে নেবে শাহজাহান কোথায় রয়েছে, রাজ্য সেটা জানে!’ যদিও এই সময় ইডির আইনজীবী আদালতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রাজ্য পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করলে তার বিরুদ্ধে লঘু মামলা রুজু করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ সন্দেশখালি থানায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে থাকা একাধিক এফআইআরের প্রসঙ্গ টেনে ইডির আইনজীবীর দাবি, “রাজ্য পুলিশ চাইলে তো ওই মামলায় শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারতো?” এরপরই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘ইডি, সিবিআই বা রাজ্য পুলিশ যে কেউ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে’। একই সঙ্গে সিট গঠনের মামলাটির শুনানির জন্য আদালত পরবর্তী সোমবার শুনানির দিন ধার্য করেছে।
এর আগে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছিল, ‘পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এটা বলা বহয়নি যে পুলিশ শাহজাহান গ্রেফতার করতে পারবে না’। এদিন ইডি-র আইনজীবী বলেন, ”অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করলে আমাদের রিমান্ডে পেতে অসুবিধা হবে। এই মামলায় আগে সিট গঠনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে পুলিশ সিবিআই সকলেই ছিল। আমরা বলব আদালত যেন সিবিআইকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়। তা হলে সঠিক ভাবে তদন্ত হবে।” এই কথা শোনার পর প্রধান বিচারপতি বলেন, ”শুধু পুলিশ কেন, সিবিআই, ইডি যে কেউই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে।” আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।