পুবের কলম প্রতিবেদক: বর্তমানে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । জানা যায়, একটা সময় তিনি চেন স্মোকার ছিলেন, তার থেকেই এই সমস্যা। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ অর্থাৎ সিওপিডি, ফুসফুসের এই অসুখ বহু বছর ধরে সঙ্গী ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। প্রথমে হাল্কা কাশি, অল্প শ্বাসকষ্ট, এর পরে বুকের ভেতর দলা পাকানো একটা ব্যথা। কাশির দমক বাড়লে শ্বাসের সমস্যাও চাগিয়ে ওঠা। এই ধরনের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে বহু বছর কাটিয়েছেন তিনি। সেই অসুখের তীব্রতাতেই এবার ফের হাসপাতালে তিনি। অবস্থা সঙ্কটজনক বলেই খবর। এই সিওপিডি-র নানা কারণ আছে। তবে প্রথম ও প্রধান কারণ ধূমপান। সেই কারণেই একে ‘স্মোকিং ডিজিজ’ও বলা হয়।
’তামাক স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকারক’, সিগারেটের প্যাকেট থেকে শুরু করে সিনেমার শুরুতে এই বিজ্ঞাপন সবসময়ই চোখে পরে আমাদের। কিন্তু তাতে কতটা সচেতন হচ্ছে সমাজ! আদৌ কি হচ্ছে! কলকাতার বাঙুল হাসপাতালের সুপার ডাক্তার শিশির নস্কর জানিয়েছেন,বর্তমানে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কেন হয় সিওপিডি? এই প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার নস্কর জানিয়েছেন, মূলত অত্যাধিক মাত্রায় ধূমপান করাই এই রোগের প্রধান কারণ।
ফুসফুসের এই রোগ, সিওপিডি-কে হেলাফেলা করা মানেই বিপদ ডেকে আনা। এখন সিওপিডির সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। একটি সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানর পশ্চিমবঙ্গে ২.৩ কোটি মানুষ ধোঁয়াযুক্ত বা ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার করেন। প্রায় প্রত্যেক বছর তামাক সংক্রান্ত রোগের কারণে প্রায় ১.৫ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের তামাক সেবন। একটি তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৪৩৮ টি শিশু তামাক সেবন শুরু করে।
ধূমপানের কারণেই ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসমা, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে। পরোক্ষ ধূমপানে ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, হাঁপানি ও বাচ্চাদের মধ্যে কানের সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা যায়। তথ্য বলছে, যে সমস্ত মানুষরা মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করতেন।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে (২০১৬-১৭) এ প্রকাশিত এক তথ্য দেখা গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ১৫ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে ৩৩.৫ শতাংশ মানুষ, যা কিনা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২.৩ কোটি, যে কোনও মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৪৮.৫ পুরুষ ও ১৭.৯ু মহিলা।
এর মধ্যে ধোঁয়াযুক্ত তামাক ব্যবহার করেন ১৬.৭ু মানুষ (৩১.৭ পুরুষ, ০.৯ মহিলা) ও ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার করেন ২০.১ (২২.৮ পুরুষ, ১৭.২ মহিলা)।
এই সমীক্ষা থেকে এও দেখা গিয়েছিল যে, পাবলিক প্লেস বা জনস্থানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ২২.৫ মানুষ। বাড়িতে বা ঘরের ভিতরে পরোক্ষ ধূমপানের দ্বারা আক্রান্ত হন ৫৬.১ মানুষ এবং কর্মক্ষেত্রে আক্রান্ত হন ৫৭.৫ মানুষ। বিড়ি (১৪.৪) সব থেকে বেশি ব্যবহৃত তামাকজাত দ্রব্য। পশ্চিমবঙ্গে বিড়ি সেবনকারীরা খরচা করেন মাসে প্রায় ৩৯০.৫০ টাকা।