কৌশিক সালুই, বীরভূম: বগটুই গণহত্যা এবং খুনের ঘটনায় চাকরি এবং আর্থিক সহায়তা টাকা নিয়ে শুরু হল পরিবারের মধ্যে বিবাদ। ছেলের মৃত্যুর সমস্ত কিছু সহায়তা পেলেও বৌমার কোনও ক্ষতিপূরণ তারা পাননি। এই অভিযোগ তুলে সিউড়ি জেলাশাসকের দ্বারস্থ হল নানুরের এক আক্রান্ত পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বগটুই এ উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন ও তার পরবর্তী গণহত্যার ঘটনায় শ্বশুরবাড়িতে এসে অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে নানুরের দান্য পাড়ার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান ও তার স্ত্রী মর্জিনা বিবি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। সাজিদুর রহমানের পরিবার ছেলের মৃত্যুর পরবর্তী আর্থিক সহায়তা ও চাকরি পেলেও বৌমার ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ তাদের।
সোমবার সাজিদুরের বাবা কাজী নুরুল জামান বীরভূম জেলা শাসকের কাছে সে বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন। এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর জেলাশাসক তাদেরকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মাদ্রাসার শিক্ষক সাজিদুরের সঙ্গে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের বানীরুল শেখের ছোটো মেয়ে মর্জিনা বিবির সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে স্বামী স্ত্রী সুখের সংসার চলছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ আসায় গণ হত্যার ঘটনার দিন কয়েক আগে স্ত্রী’কে সঙ্গে নিয়ে সাজিদুর শ্বশুরবাড়ি বগটুই গ্রামে যায়। ঘটনার রাতেই ওই গ্রামের বাসিন্দা বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের ঘটনা ঘটে যায়। ওই ঘটনায় জড়িত এই আক্রোশেই রাতেই বগটুই গ্রামের একের পর এক বাড়িতে হামলা শুরু হয়। সেই হামলার শিকার হন বানীরুল শেখ ও তার পরিবার। তার মাটির বাড়িতে হামলা শুরু হয়। চলে বাড়ি লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমাবাজি। প্রান বাঁচাতে বাড়ির পুরুষ মানুষরা অনেকেই পালিয়ে গেলেও। বাড়ির জামাই সাজিদুরকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করে বাড়ির মহিলারা। দুষ্কৃতীরা বানীরুলের মাটির বাড়িতে আগুন লাগাতেই শাশুড়ি, স্ত্রী সহ অন্যদের নিয়ে সামনের পাকা বাড়ি তে আশ্রয় নেয় সাজিদুর। বানীরুলের সামনের বাড়িটি সোনা শেখের। কিন্তু দুষ্কৃতীরা সোনা শেখের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাবা কাজী নুরুল জামান অভিযোগ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যেদিন রামপুরহাটে চেক দিয়ে যাবে সেদিন ছেলের শ্বশুর বানিরুল শেখ আমাকে ফোন করে বলেন, আপনি দুটি চেক নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে গেলে বলেন একটামাত্র চেক দিয়েছি এখনও বাকি চেক পাওয়া যায়নি দিলে আপনাকে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর পাইনি। ওনার স্ত্রী মারা গিয়েছে তার জন্য ছেলে কিরন সেখ চাকরি পেয়েছে। কিন্তু ওনার বড় মেয়ে মিলি চাকরি পেয়েছে। সে কি করে পেয়েছে? পরিবারের একজন মারা গেল অথচ দুটো চাকরি। আর আমার ছেলে এবং বোমা দুজন মারা গেল সেখানে আমরা একটি মাত্র পেলাম। এই বিষয়ে আমরা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন”।
অন্যদিকে এই গণহত্যা ঘটনায় ধৃত দুই নাবালকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল সিউড়ির জাস্টিস জুভেনাইল বোর্ড। এদিন হোম হেফাজতে থাকার পর জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে মামলার শুনানি হলে বিচারক সেই জামিন মঞ্জুর করেন। ১৪ দিন পর এই মামলার ফের শুনানি হবে। ধৃত দুজনের মধ্যে একজনকে আগামী একমাস সংশ্লিষ্ট গ্রামে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি দুইজনকেই নিয়মিত কাউন্সেলিং করতে বলা হয়েছে।