কৌশিক সালুই, বীরভূম: আদিবাসী ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বীরভূম জেলার এক মাত্র শিল্প হল কালো পাথর। আর এই শিল্পের সঙ্গে রুজি রুটির জড়িয়ে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। জেলার অর্থনীতির মূল স্তম্ভ এই শিল্পের উপর দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকার ফলে জেলাজুড়ে বৃহস্পতিবার থেকে পাথর শিল্প বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে যেমন সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষজন পাশাপাশি বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হবে রাজ্য সরকারের।
বিগত কয়েক বছর থেকে আইনি জটিলতায় বীরভূম জেলার পাথর খাদান থেকে পাথর তোলার অনুমতি বন্ধ হয়ে আছে সরকারি ভাবে।
কিন্তু এই কারবারের সঙ্গে জড়িত মানুষজনের রুজি রোজগারের কথা ভেবে প্রশাসন জরিমানা আদায় করে পাথর শিল্প সচল রেখেছিল।
কিন্তু বর্তমানে জাতীয় পরিবেশ আদালত জেলা প্রশাসনকে অনুমতি বিহীন পাথর খাদানগুলিকে অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সেই আইনি জটিলতার কারণে এদিন থেকে জেলাজুড়ে ধর্মঘটের পথ নিয়েছে জেলার পাথর শিল্প। প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি অবিলম্বে জাতীয় পরিবেশ আদালতের জটিলতা কাটিয়ে তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে পাথর শিল্প চালার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালে। সেই বছর ২৯ জুলাই পাথর শিল্পাঞ্চলে খাদানগুলিতে ক্লোজার নোটিশ ধরানো হয়েছিল মালিকদেরকে।
সেই সময় তাঁদেরকে পাথর খাদানের দীর্ঘ মেয়াদি লিজ করে নিতে বলা হয়। কিন্তু জেলার সমস্ত পাথর খাদান রায়ত সম্পত্তি অর্থাৎ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে পাথর খাদান। সেই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে কিভাবে দীর্ঘমেয়াদী লিড হতে পারে সেই নিয়ে কার্যত দিশাহীন জেলার পাথর ব্যবসায়ীরা। তাই তাদের বর্তমানে দাবি পাথর শিল্প যদি চালাতে হয় তাহলে সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
বীরভূম জেলায় ২১৭টি পাথর খাদানের মধ্যে ২১১টির অনুমোদন নেই। মাত্র ৬টি পাথর খাদানের সেই অনুমতি আছে। জেলার পাঁচামি, তালবাঁধ, শালবাধরা, বড়পাহাড়ী, নলহাটি, রাজগ্রাম এলাকায় প্রায় ১৭০০টি পাথর ভাঙার মেশিন আছে।
এদিন থেকে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বেকার হয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। এর ফলে যেমন কারবারের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ প্রবল সমস্যায় পড়বেন পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পাথর থেকে প্রাপ্ত রয়ালিটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন রাজস্ব ক্ষতি প্রায় এক কোটি টাকার।
এই শিল্পের সমস্যার সূত্রপাত ১৯৭২ সাল থেকেই সরকার সেই সময় ৬ মাসের জন্য পাথর তোলার অনুমোদন দিত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেটা বাতিল করে দেয়।
এরপর পাথর ব্যবসায়ীরা কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সরকারের সেই আদেশের উপর স্থগিতাদেশ অর্ডার করে নেয়। আদালতের নিযুক্ত রিসিভারের কাছে তারা নিয়মিত রাজস্ত জমা করে আসতো। বিগত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারকে জরিমানা দিয়ে পাথর শিল্প চালিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।
এবার জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিয়ম মানার খোচায় শিল্প কার্যত বন্ধ করতে বাধ্য হলেন জেলার পাথর ব্যবসায়ীরা।
বীরভূম জেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কমল খান বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে আইন মেনে ব্যবসা করতে। তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এই শিল্প বন্ধের ফলে সাধারণ মানুষের রুজি-রুটির যেমন টান পড়বে। পাশাপাশি সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
বীরভূম জেলার পাথর শিল্প চালুর বিষয়টি আমরা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছি। যতদিন এর সুষ্ঠু সমাধান না হবে ততদিন এই কারবার বন্ধ থাকবে”।