পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘ভারত মাতা কি জয়’ ও ‘জয় হিন্দ’-স্লোগানগুলির স্রষ্টা মুসলিম। মুসলিমরাই প্রথম এই স্লোগান দু’টির উত্থাপন করেছিলেন। এখন সংঘ পরিবার কি এই স্লোগানগুলি পরিত্যাগ করবে? প্রশ্ন তুলেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
সোমবার এই প্রসঙ্গে বিজয়ন বলেছিলেন যে, ‘ভারত মাতা কি জয়’ এবং ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানগুলি প্রথমে দু’জন মুসলমান উত্থাপন করেছিলেন, এবং তাঁর প্রশ্ন ছিল, সংঘ পরিবার কি এই স্লোগানগুলিকে ত্যাগ করবে? সোমবার উত্তর কেরলের এক মুসলিম অধ্যুষিত জেলায় প্রচারে গিয়েছিলেন বিজয়ন। সেখানে এই প্রবীণ সিপিএম নেতা বলেছিলেন যে, মুসলিম শাসক, আলেম ও কর্মকর্তারা দেশের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলে। নিজের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে ইতিহাস থেকে উদাহরণ তুলে ধরে বিজয়ন বলেন, আজিমুল্লাহ খান নামে একজন মুসলিম ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানটি তুলেছিলেন। উল্লেখ্য, বিজয়ন প্রচারে আসায় সেখানে উপস্থিত সংঘ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে বিজেপি ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দেয়। তা নিয়েই পরে বিজয়ন সংঘ পরিবারকে এই নিয়ে কটাক্ষ করেন ও আজিমুল্লাহ খানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বিজয়নের কথায়, ‘এখানে আসায় সময় সঙ্ঘ পরিবারের কিছু নেতা সামনে বসে থাকা লোকদেদর ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান তুলতে বলছিলেন। কিন্তু, ওরা কি জানে কে প্রথম এই স্লোগান তুলেছিল? আমার জানা নেই সঙ্ঘ পরিবারের লোকজন তাঁর নাম জানেন কিনা। তাঁর নাম আজিমুল্লাহ খান কিনা। বিজয়নের প্রশ্ন, একজন মুসলিম এই স্লোগানটি তৈরি করেছিলেন এটা জানার পর সংঘ পরিবার কি এই স্লোগানটির ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবে কিনা। বিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে রাজ্যে সিপিআই(এম) আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন বিজয়ন। সোমবার ছিল চতুর্থ সমাবেশ। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আবিদ হাসান নামে এক মুসলিম প্রথম ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান তুলেছিলেন। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে দারা শিকোহ ৫০টিরও বেশি উপনিষদকে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করে এই ভারতীয় গ্রন্থগুলিকে সারা বিশ্বে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন। আর তাই মুসলিমদের ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পক্ষে সওয়ালকারী সংঘ পরিবারের নেতা-কর্মীদের উচিত দেশের এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথে পরিচিত হওয়া। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলিমরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিজয়ন অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের আরএসএস-নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সিএএ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কেরলের গণতান্ত্রিকভাবে সচেতন জনগণ এই সিএএ’কে কোনও অবস্থাতেই গ্রহণ করবে না। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘কেন্দ্র দাবি করেছে যে সিএএ-র উদ্দেশ্য হল পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া যারা দেশে আশ্রয় চায়, কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য হল বাস্তুচ্যুত মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা। বিজেপি-নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ছাড়া বিশ্বের আর কোনও দেশ কখনও শরণার্থীদের ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করেনি। কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র এর বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, সঙ্ঘ পরিবারের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের সমস্ত আপত্তি উপেক্ষা করে এগিয়ে গিয়েছিল এবং এটি ফ্যাসিবাদী শাসক অ্যাডলফ হিটলারের পথকেই অনুসরণ করেছিল। রাজ্যে বামপন্থী সরকারই দেশে প্রথম যার এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। রাজ্যের এলডিএফ সরকার সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য সবাইকে এক ছাতার নীচে আনার আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কংগ্রেস তা থেকে সরে আসে। এরপরই কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বিজয়ন বলেন, ‘অভিজ্ঞতা দেখায় যে, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভে কংগ্রেসের আন্তরিকতার অভাব ছিল। এমন এক সময়ে যখন সারা দেশ এই বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, কংগ্রেস সাংসদরা পার্টি সভাপতি আয়োজিত একটি ভোজসভায় মেতে ছিলেন। বিজয়ন আরও বলেন, বিক্ষোভের সময় কংগ্রেসের কোনও নেতা উপস্থিত ছিলেন না। রাহুল গান্ধি বিদেশে ছিলেন। ঐনি কেন্দ্রকে দাঙ্গাবাজদের নির্লিপ্ত অনুমতি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন যখন সংঘ পরিবার দিল্লিতে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর সহিংসতা শুরু করেছিল। বজয়ন আরএসএসকে আরও আক্রমণ করে বলেছেন যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদর্শ ও কাঠামো অ্যাডলফ হিটলারের ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। বিজয়ন তার একটি বইতে আরএসএস মতাদর্শী এম এস গোলওয়ালকরের উদ্ধৃতিও উল্লেখ করেছেন, যেখানে খ্রিস্টান, মুসলমান এবং কমিউনিস্টদের দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, আরএসএসের আদর্শ কোনও প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, বেদ বা মনুস্মৃতি থেকে নেওয়া হয়নি বরং হিটলারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।