পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথমবার সউদি আরব সফরে জো বাইডেন। শুক্রবার তাকে প্রাসাদে স্বাগত জানান সউদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান। পরে যুবরাজসহ সউদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয় তাদের। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা বিনিয়োগ, জ্বালানিসহ অন্তত ১৮টি চুক্তি হয়েছে। তুরস্কের ইস্তান্বুলে সউদি দূতাবাসে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে একসময় রিয়াদের বিরুদ্ধে সুর তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেসময় ওই হত্যাকান্ডের জন্য সরাসরি সউদি যুবরাজকে দায়ী করেছিল মার্কিন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় রিপোর্টও প্রকাশ করেছিল আমেরিকা। তবে বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন যুবরাজ সালমান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একসময় তিক্ততাও দেখা দেয়। তারপরও সউদি সফর করছেন বাইডেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফরের উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে ইরান বিরোধী একটি মার্কিন জোট তৈরি করা। মার্কিন জোটে পশ্চিমাপন্থী দেশগুলি থাকবে, আর এতে ব্যাপক সুবিধা হবে ইসরাইলের। তাই এই সফরকে মার্কিন স্বার্থের বলে উল্লেখ করছেন সমালোচকরা। মূলত রাশিয়া, চিন ও ইরানকে ঠেকাতে সউদির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় নেমেছেন বাইডেন। সউদি প্রেস এজেন্সি জানায়, যুবরাজ সালমান ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন দ্বিপাক্ষিক সহায়তা জোরদার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পরে বাদশাহ সালমানের সঙ্গেও বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা যুবরাজ সালমান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. মুশায়েদ বিন আইবান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বাইডেনের সঙ্গে ছিলেন বিদেশমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। তবে যুবরাজের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নীরব ছিলেন বাইডেন। বিনিময়ে তিনি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সউদিকে চাপ দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, বৈঠকে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি। বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে মানবাধিকারের বিষয়টি আমার এবং আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সউদি সফরকে ঘিরে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। বাইডেনকে খুশি করতে ইসরাইলি বিমানের জন্য আকাশসীমা খুলে দেয় সউদি। শুক্রবার জেদ্দায় প্রিন্স বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। বাইডেনের এই সফরের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের বেশকিছু দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে উদাসীন বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুক্রবার ইসরাইল সফর করেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি জেরসালেমে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে মত দিয়ে বাইডেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ নিজস্ব একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবিদার।’ যদিও দুই পক্ষের শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি। তাই আপাতত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের রাস্তা খুলছে না। বাইডেনের সফরকালে বেথলেহেমে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল সদর দফতরের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবিতে স্লোগান দেন।