পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: অশান্তির আগুনে জ্বলছে মণিপুর। উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়েছে হিংসা। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ায় ৩৫৫ ধারা জারি করেছে কেন্দ্র। যা রীতিমতো নজিরবিহীন বলেই মানছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। স্পর্শ কাতর এলাকা গুলিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ এবং নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। দুই পক্ষের এই সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের মত আহত বহু।
সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া সাক্ষাৎকারে থংজাথাং হাওকিপ নামক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ৩ মে রাতের দিকে হাওকিপ তার স্ত্রী, মা এবং শ্যালিকার সাথে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ইম্ফল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। কারণ ওই দিনেই আমার শ্বশুর ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে গিয়েছিলেন। বেশ কয়েক দিন ধরে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ রুদ্রমূর্তি ধারণ করা বিক্ষুব্ধ জনতা অ্যাম্বুলেন্সটির পথ আটকে দেয়। এবং তারা আমাদের বলতে থাকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে বের না হলে গাড়ি সমেত আমাদের পুড়িয়ে দেবে। আমরা ভয় পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। আমরা গাড়ি থেকে বাবার লাশ বের করা মাত্রই তারা গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
বীরেন সিং বলেন, ইম্ফল, সুসানপুর, বিষ্ণুপুর, কাংপোকপি, মোরে (অতিরিক্ত অঞ্চল) প্রভৃতি জায়গায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় মানুষের সম্পত্তির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। সমাজের দুই অংশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ভুল–বোঝাবুঝির কারণেই এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বাড়তি আধা সামরিক বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছে। মণিপুরের সঙ্গে মিয়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় মিয়ানমারের অংশে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে ওই দেশের সামরিক গোয়েন্দার একটি সূত্রে খবর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসাম রাইফেল ও ভারতীয় সেনাবাহিনী মিলিয়ে মণিপুরে প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যাবতীয় ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং ১১ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বঞ্চনার যে অভিযোগ উঠেছে, তা মাথায় রেখে আলাপ-আলোচনা করা হবে। কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
তবে মণিপুরের সাধারণ মানুষের বক্তব্য, পরিস্থিতি সরকার বা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেই। পশ্চিম মণিপুরের বিজেপির জনজাতি সমাজের এমএলএ ভুংজাগিন ভাল্টে ইম্ফলে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, তাদেরও একাধিক নেতা আক্রান্ত হয়েছেন।