পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: নির্বাচনী বন্ডের সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতে এসবিআই’কে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। বহু টালবাহানার পরে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম নির্দেশ মতোই, কোন কোন সংস্থা বন্ড কিনেছে এবং কাদের দেওয়া হয়েছে সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বিষয়টি স্থগিত রাখার চেষ্টা করা হলেও, তার আগেই ঝুলির বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এমন কিছু সংস্থা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি তদন্ত করছিল কেন্দ্রীয় বিভিন্ন এজেন্সি। আবার এও দেখা গিয়েছে, এমন কিছু কিছু সংস্থা রয়েছে যারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়েছে, এবং বড় বড় সরকারি প্রকল্পের বরাত পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি বিজেপি ইডি-সিবিআই’কে ওদের ফান্ড ভরানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
কমিশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তের মুখে পড়া ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’। ২০২০-২০২৩ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে তারা। ২০২২ সালের ২ এপ্রিল ইডি ‘ফিউচার গেমিংয়ের অফিসে অভিযান চালায়। তার ঠিক ৫ দিন পরে অর্থাৎ ৭ এপ্রিল ইলেক্টোরাল বণ্ডের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা দান করে তারা। এটি লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা বলে জানা গেছে। মূলত দক্ষিণ ভারতে লটারি ব্যবসা শুরু করলেও এই মুহূর্তে উত্তর-পুর্ব ভারত এমনকি নেপাল ও ভুটানেও তাঁর লটারি ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে।
৯৬৬ কোটি টাকার বণ্ড কিনে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। ২০১৯ সালে আর্থিক তছরুপের মামলায় আয়কর দফতরের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাদের। তবে গত বছরই পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১৪ হাজার কোটি টাকার বরাত পেয়েছে কেন্দ্রের থেকে। ৪১০ কোটি টাকার বন্ড কিনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্রের ‘কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড’। এই সংস্থার সঙ্গে আম্বানিদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলেও খবর।
এছাড়াও রয়েছে,
১) বেদান্ত লিমিটেড – ৪০০ কোটি টাকা (২০২২ সালের আগস্ট মাসে আর্থিক তছরূপ মামলায় ইডি’র প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এই সংস্থা’কে। )
২) হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড – ৩৭৭ কোটি টাকা (২০২০ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সংস্থার দ্বারা হয়রানির স্বীকার হয়েছিল)
৩) ডিএলএফ কমার্শিয়াল ডেভেলপার্স: ১৩০ কোটি টাকা (২০১৯, ও ২০২৩ সালে নানাবিধ কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এর তল্লাশির সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই কোম্পানিকে)
৪) জিন্দল ষ্টীল এবং পাওয়ার লিমিটেড: ১২৩ কোটি টাকা (বিদেশী মুদ্রা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ২০২২ সালে ইডি এই কোম্পানির বিভিন্ন অফিসে অভিযান চালায়। )
৫) চেন্নাই গ্রীনউডস প্রাইভেট লিমিটেড:১০৫ কোটি টাকা (২০২১ সালের জুলাই মাসে আয়কর দফতর হানা দেয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচনী বণ্ডে ১০৫ কোটি টাকা অনুদান দেয়। )
৬) ডঃ রেড্ডি’স ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড: ৮0 কোটি ( কর ফাঁকির অভিযোগে ২০২৩, নভেম্বর মাসে এই কোম্পানিতে অভিযান চালায় আইটি আধিকারিকরা। )
৭) আইএফবি এগ্রো লিমিটেড: ৯২ কোটি
৮) ইউনাইটেড ফসফরাস ইন্ডিয়া লিমিটেড: ৫০ কোটি
৯) ভারতী গ্রুপ – ২৪৭ কোটি টাকা
১০) এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড – ২২৪ কোটি টাকা
১১) ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড – ২২০ কোটি টাকা
১২) কেভেন্টার ফুডপার্ক ইনফ্রা লিমিটেড – ১৯৫ কোটি টাকা
১২) মদনলাল লিমিটেড – ১৮৫ কোটি টাকা
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইডি, সিবিআই ও আয়কর দফতরের অভিযানের পর কোম্পানিগুলি নির্বাচনী ট্রাস্টের মাধ্যমে বিজেপিকে অনুদান দিতে বাধ্য হয়েছিল। হেটেরো ফার্মা , যশোদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মতো বহু কোম্পানি অনুদান দিয়েছে।
গত ১০ বছরে আরও ১৫টি কোম্পানির থেকে অনুদান নিয়েছে বিজেপি। তার মধ্যে চারটি এমন সংস্থা রয়েছে, যাদের নাম ২০১৭ সালে ভুয়ো কোম্পানির তালিকায় তুলেছে সেবি। নির্বাচনী অনুদান প্রাপকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। ৬,০৬০ কোটি টাকা রাজনৈতিক অনুদান হিসাবে পেয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, ১,৬০৯ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে তারা। কংগ্রেস পেয়েছে ১,৪২২ কোটি টাকা।