পারিজাত মোল্লাঃ ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিৎসা করানো নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার বিবাদ এখনও মিটলো না।বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। এদিন আদালতের তরফে আপাতত চিকিৎসা করানো নিয়ে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে তদন্তকারী সংস্থা ইডি কে বিকল্প হাসপাতাল খোঁজ করার নির্দেশ রয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের রেগুলার বেঞ্চে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
কমান্ড হাসপাতালেই আরও দু’বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। মন্ত্রী-সহ সিবিআই-ইডির মামলায় ধৃতদের চিকিত্সায় আপত্তি জানিয়েছিল কমান্ড হাসপাতাল।কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে কমান্ড হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প জায়গার খোঁজ করতে বলেছিল আদালত।তবে সমাধান অধরায় রয়ে গেছে। রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে । এই সংক্রান্ত মামলায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে যে -‘ আপাতত কমান্ড হাসপাতালেই হবে জ্যোতিপ্রিয়র চিকিত্সা’ ।
ইডিকে বিকল্প হাসপাতাল খোঁজার জন্য ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময় আদালতের । আপাতত বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সা হবে কমান্ড হাসপাতালেই । সিটি সেশন কোর্টে পেশের আগে প্রতি একদিন অন্তর তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে বলে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ।এই মামলায় বিচারপতি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর চিকিত্সা সংক্রান্ত নির্দেশে আরও জানিয়েছেন যে -‘ রাজ্য পুলিশকে নজর রাখতে হবে, যাতে কোনও সাধারণ নাগরিক কমান্ড হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পারেন’ ।
আদালতের আরও নির্দেশ, ১৬ নভেম্বরের মধ্যে ইডি-কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা বিকল্প কোন কেন্দ্রীয় হাসপাতালে অভিযুক্তের চিকিত্সা করাবেন ।কমান্ড সেনার হাসপাতাল তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে । আর ইডি কাজ করে অর্থমন্ত্রকের অধীনে । এদিন আদালতের শুনানিতে কেন্দ্রের এই দুই মন্ত্রকের মধ্যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিত্সার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয় । দুই পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে বিতর্কও হয় এদিন এজলাসে ।এদিন শুনানিতে বিচারপতি দুই পক্ষের কাছে জানতে চান, “আপনারা কী চান ?” উত্তরে ইডির আইনজীবী বলেন, “আমাদের কিছু বলার নেই । এটা কমান্ড হাসপাতালের মামলা । আদালত রায় দিয়েছে । একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দূরে নিয়ে যাওয়া সমস্যা । এটা আমাদের পক্ষে সমস্যা ‘।কমান্ড হাসপাতালের তরফে আইনজীবী জানান, -‘ একদিন অন্তর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে হবে । অন্য কেন্দ্রীয় হাসপাতালে হতে পারে । এটা শুধুমাত্র সেনাদের জন্য । এখানে কোনও সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারেন না । একমাত্র রাজ্যপাল আসতে পারেন । এখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা মিডিয়া ঢুকতে পারে না । কল্যাণী এইমস, ইএসআই, সল্টলেক বিএসএফ হাসপাতাল-সহ অনেক কেন্দ্রীয় হাসপাতাল আছে’ । নিম্ন আদালতে তাঁদের কথা শোনা হয়নি বলেও জানান কমান্ড হাসপাতালের আইনজীবী ।সেনার তরফে বলা হয়, “আমরা সেনার সমস্ত ফোর্সের চিকিত্সা করি ।
এমনকী, অসম রাইফেলসের জওয়ানদের চিকিত্সা করি ।” বিচারপতি জানতে চান, “কবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চেক আপের দিন?” কমান্ড হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, “আগামী শনিবার ।”বিচারপতি বলেন, ”আপনারা দুই বিভাগের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করছেন না কেন ?” ইডির আইনজীবী বলেন, “১৬ নভেম্বর পর্যন্ত কমান্ড হাসপাতালেই মন্ত্রীর চিকিত্সা হোক ।” তবে কমান্ড হাসপাতালের তরফে বলা হয়, “না । এটা হবে না । রেলওয়ে হসপিটাল আছে । ইএসআই আছে ।” শেষে বিচারপতি কমান্ড হাসপাতালকে নির্দেশ দেন, “দু’দিন চিকিত্সা করুন । নিম্ন আদালতে আপনাদের আবেদন বিচারাধীন । নিম্ন আদালতে কী নির্দেশ দেয় দেখার পর ১৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে এই মামলার ।’
এরফলে আদালতের অনুরোধ মেনে আগামী ১১ ও ১৩ নভেম্বর ফের কমান্ড হাসপাতালেই হবে মন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে এজলাসেই কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি । তবে জ্যোতিপ্রিয়র স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় কোনও সাধারণ নাগরিক সেখানে যাতে প্রবেশ করতে না পারে এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশকে নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, -‘ এর আগে ওই হাসপাতালে চার বার ধৃত মন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে’। আদালতের অনুরোধে কমান্ড হাসপাতাল আরও দু’বার জ্যোতিপ্রিয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুমতি দেবে। তবে কোনও সাধারণ নাগরিক কমান্ড হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেউ যাতে ঢুকতে না পারে তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। আলোচনার ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে ইডিকে। এই বিষয়টি নিম্ন আদালতে জানাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
তারপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নিম্ন আদালত।রেশন দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৬ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতারের পরের দিন অর্থাত্ ২৭ অক্টোবর এজলাসেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মন্ত্রী। তাঁকে রাখা হয়েছিল বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এই মুহূর্তে দ্বিতীয় দফায় ইডি হেফাজতে রয়েছেন মন্ত্রী। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত।এরপরই মন্ত্রীর চিকিত্সা করার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তাঁদের দাবি, – শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের চিকিত্সা করা হয় এই হাসপাতালে। সাধারণ নাগরিকের চিকিত্সা সেখানে শুরু করলে অন্য নানা ধরনের সমস্যা শুরু হতে পারে’। এই মামলাতেই গত বুধবার বিচারপতি মন্ত্রীর চিকিত্সা নিয়ে ইডি, কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ইস্টার্ন কমান্ডকে কোর্টের বাইরে বসে মীমাংসা করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।তবে আলোচনায় কোন সমাধান সুত্র মিলেনি।আপাতত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের চিকিৎসা হবে কম্যান্ডো হাসপাতালে।আগামী ১৬ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সেদিনই ইডি কে বিকল্প হাসপাতাল এর নাম।আদালতে জানাতে হবে।