পুবের কলম প্রতিবেদক: মুসলিমদের শিক্ষার উন্নতির জন্য এবং যাতে তারা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ১৭৮০ সালে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অভ্যন্তরেই গড়ে ওঠে অ্যাংলো-পার্সিয়ান স্কুল। এই অ্যাংলো-পার্সিয়ান ডিপার্টমেন্টের ১৬৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের। একইসঙ্গে ছিল এই স্কুলের মূলত উর্দু বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা প্রকাশিত পত্রিকা সুভ-ই-নও (নয়া ভোর) উদ্বোধন।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, মুসলিম ইন্সটিটিউটের জেনারেল সেক্রেটারি নিসার আহমেদ, বরো-৬-এর চেয়ারপার্সন সানা আহমদ, বরো-৫-এর চেয়ারপার্সন রেহানা খাতুন প্রমুখ। আর ছিলেন এই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক ড. শাহিদ হুসেইন খান।
প্রথমেই বক্তব্য রাখেন প্রবীণ শিক্ষক আলিম আলি সিদ্দিকী সাহেব। তিনি অ্যাংলো-পার্সিয়ান ডিপার্টমেন্টের পুরনো ইতিহাস এবং বর্তমান দুরবস্থার একটি ছবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই স্কুলের একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে, এখানে শিক্ষকদের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। যখনই কোনও শিক্ষক অবসর নেন, তাঁর জায়গায় নতুন শিক্ষক আর নিয়োগ হয় না।
সিদ্দিকী সাহেব আরও বলেন, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে এখন কোনও শিক্ষক নেই। এপি ডিপার্টমেন্টের জন্য উন্নতমানের ল্যাব ছিল, এখন নেই। কারণ, আলিয়া মাদ্রাসা বিল্ডিং থেকে তা নতুন গড়া ভবনে এপি ডিপার্টমেন্টকে স্থানান্তর করা হলে ল্যাব শিফট করা যায়নি। ফলে পড়ুয়ারা ল্যাবের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তবে উর্দু বিভাগের পড়ুয়ারা যে সুযোগ পেলে খুব ভালো ফলাফল করতে পারে, আমাদের এপি স্কুল তার প্রমাণ রেখেছে। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় আমাদের ছাত্র মুহাম্মদ এহসান উর্দু স্কুলগুলির মধ্যে প্রথম এবং রাজ্য মেধাতালিকায় একাদশ স্থান অধিকার করেছে।
মুসলিম ইন্সটিটিউটের নিসার আহমেদ বলেন, আমরা নিজেরাই আমাদের ইতিহাস তৈরি করতে পারি। তিনি তাঁর বক্তব্যে ছাত্রদের উৎসাহিত করেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানে আহমদ হাসান ইমরান স্কুলের এপি ডিপার্টমেন্টের গুরুত্ব ও শিক্ষা ব্যবস্থার অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অ্যাংলো-পার্সিয়ান স্কুল ছাত্র ও শিক্ষকরা আজাদি সংগ্রামের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই স্কুল এখন অবক্ষয়ের মধ্যে পড়েছে। এটি সরকারি স্কুল। সরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
কমিশন পরীক্ষা নিয়ে সেরা শিক্ষকদের নির্বাচিত করে। কিন্তু এই স্কুলে কেন পিএসসি শিক্ষক নিয়োগ করছে না, তা সত্যিই রহস্যময় বিষয়। ইমরানের বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল কী উঠে যাক, তা কারও কাম্য হতে পারে না। তাই এই স্কুলকে বাঁচানোর জন্য সকলকে প্রচেষ্টা করতে হবে।
ইমরানের কথায়, এই স্কুলে বরাবর বাংলা পড়ানো হত। এখন বাংলা বিভাগটি উঠে যাওয়ার মুখে। আমরা চেষ্টা করলে এই স্কু্লের বাংলা বিভাগকে শক্তিশালী করতে পারি। তিনি উর্দু নিয়ে যেসব সমস্যা হচ্ছে, তা কমিশন থেকে সরকারের কাছে প্রেরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
এ ছাড়া ইমরান বলেন, জননেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ে মাধ্যমেও আমরা অনেক কাজ করতে পারি। তাঁরা সবসময় উর্দু ও সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম যেসব স্কলারশিপ এবং স্টুডেন্ট লোন দিচ্ছে, তা থেকে ফায়দা নেওয়ার জন্য উর্দুভাষী ছাত্র ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন এপি ডিপার্টমেন্ট স্কুলের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে বলেন, বর্তমানে মূলত উর্দু ভাষার এই উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলি সমাধানের জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্কুলের ল্যাব-সহ অন্যান্য সমস্যায় সাংসদ তহবিল থেকে উন্নয়ন ঘটানোর আশ্বাস দেন। তাঁর স্ত্রী বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও আশ্বাস দেন আর্থিক সহযোগিতার। তিনি বলেন, এ রাজ্যে অনেক মুসলিম উর্দুভাষীদের বসবাস। রাজ্যের স্কুল পড়ুয়াদের নানা সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। স্কুলে যাওয়ার জন্য সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, পরিবারে একজন কন্যা শিক্ষিত হলে পুরো পরিবার শিক্ষিত হতে পারে। তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখবেন বলে জানান।
বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় চোস্ত উর্দুতে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, এই স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে সম্মিলিতভাবেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। উর্দু ভাষা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, উর্দু খুবই মিষ্টি ভাষা এবং তিনিই উর্দু বলতে ও শিখতে ভালোবাসেন। হিন্দি সিনেমার উর্দু ডায়লগ শুনে তাঁর এখন উর্দু বলা অনেকটা রপ্ত হয়ে গেছে।
রেহানা খাতুন তাঁর বক্তব্যে ছাত্র ও অভিভাবকদের উদ্দীপ্ত করেন।
এপি ডিপার্টমেন্ট স্কুলের প্রধানশিক্ষক শাহিদ হুসেইন খান এই স্কুলটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশিষ্টদের কাছে আবেদন রাখেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ’তার হোসেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জাভেদ নেহাল হাসমি। স্কুলের পড়ুয়া-সহ শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাজদার আলি মির্জা, আলিম আরিফ সিদ্দিকী, তাফাজ্জুল হোসেন, আফতাব আলম প্রমুখ।