নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা : চলতি মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের এক সেরা সংগ্রহ যদি হয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপার জেসন কামিন্স, তাহলে আর এক সেরা সংগ্রহ নিশ্চিতভাবেই দেশিয় ফুটবলার আনোয়ার আলি। একটা সময় যাঁর ফুটবল কেরিয়ারটাই অনিশ্চয়তায় ঘিরে গিয়েছিল সেই আনোয়ার আলি যে ফিনিক্স পাখির মতো এভাবে উত্থিত হতে পারেন, এটা অনেকেরই ধারনাতেই ছিল না। একটা সাংঘাতিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন আনোয়ার আলি। যে রোগটায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তার নাম হাইপারট্রোফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। সংক্ষেপে এইচসিএম। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির হৃদ্পিন্ডে রক্ত জমাট বাঁধে খুব দ্রুত। এবং এতটাই তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বেঁধে যায়, যে তা পাম্প করে তাড়াতাড়ি বের করার উপায় থাকে না। শরীর দুর্বল হতে থাকে। হাত পায়ে কোনও সারথাকে না। আর এর বাস্তব সম্ভাবনা? কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। ভিভিয়ান ফো, মিকলোস ফেহার, অ্যান্টোনিও পুরেটার মত অ্যাথলিটেরও এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল। এমন রোগে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে তিনি ফিট, কিন্তু তাঁর হৃদয় ৮০ বছরের বৃদ্ধের থেকেও দুর্বল হতে বাধ্য।
এমন একটা রোগে আক্রান্ত হওয়া আনোয়ারের চিকিৎসাও খুব একটা সহজ ছিল না। সেই সময় সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন তাঁর চিকিৎসার জন্য সবরকম চেষ্টা করেছিল। আর্থিক দিক থেকে আনোয়ার যে খুব একটা অবস্থাপন্ন বাড়ি থেকে উঠে এসেছিলেন এমনটা নয়। তাই চিকিৎসার ভার বহন করতে গিয়েও তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে অসহ্য যন্ত্রনা। কিন্তু ডিফেন্ডারের মানসিকতা একেবারে ডিফেন্ডারের মতোই। কষ্টশিষ্ট করে চিকিৎসার পর ফিরে এসেছেন ফুটবলে। একটা সময় ডাক্তাররাই বলেছিলেন আনোয়ার আর কোনওদিন ফুটবলটাই খেলতে পারবেন না। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে এই তথ্যকে মিথ্যে প্রমাণিত করে ফিরে এসেছেন আনোয়ার।
জাতীয় দলে অনিরুদ্ধ থাপার সঙ্গে তাঁর বন্ধন অটুট। ভারতীয় ডিফেন্সের এখন সেরা অস্ত্রের একজন যদি অনিরুদ্ধ থাপা হন, তাহলে আরেকজন অবশ্যই আনোয়ারআলি। শুধু ভারতীয় দলে নয়, এই মুহূর্তে মোহনবাগান ডিফেন্সেও অনিরুদ্ধর যোগ্য সঙ্গী আনোয়ার আলি। শুধু ডিফেন্স করাই নয়, গোল করতেও সিদ্ধহস্ত তিনি। কয়েকদিন আগেই এএফসি কাপের ম্যাচে মোহনবাগানের হয়ে জোড়া গোল করার পর জেসন কামিন্স আনোয়ারকে উল্লেখ করেছিলেন, ‘ভারতের সার্জিও র্যামোস’ নামে। কারণ র্যামোস ডিফেন্ডার, আবার গোল করতেও সিদ্ধহস্ত। সেই আনোয়ার ফের একবার মোহন জার্সিতে কাঁপিয়ে দিলেন রবিবার। মুম্বই সিটির মতো একটি দলের বিরুদ্ধে বাগানের রক্ষণ সামলে যেভাবে গোলও করলেন তাতে কামিন্সের মন্তব্য খুব একটা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না। জীবন যুদ্ধে যাঁর বাঁচাটাই একটা সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল, সেই আনোয়ারই এখন মোহনবাগান জার্সি গায়ে বিপক্ষের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন।