পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কথায় কথায় বুলডোজার ও এনকাউন্টার সমানতালে চলছে। আর এই নির্মমতার নিরিখে উত্তরপ্রদেশের যোগীর সঙ্গে অসমের হিমন্তর চলছে ‘কাঁটে কা টক্কর’।
গুজরাতের ইশরাত জাহান থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের বিকাশ দুবে—প্রতিটি ক্ষেত্রেই এনকাউন্টারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল অসমের বরাক উপত্যকায়। সেখানে কামরুল ইসলাম (৩৫) ও আনোয়ার হুসেন (২৩) নামে দুই সংখ্যালঘু যুবককে এনকাউন্টারে হত্যা করেছে অসম পুলিশ। বিকাশ দুবে ও তার সঙ্গীর মতো এক্ষেত্রেও ‘চিত্রনাট্য’ একই—পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টার কারণে এনকাউন্টার। প্রশ্ন উঠছে, নিরস্ত্র কেউ যদি পালানোর চেষ্টা করে তাহলে তার পায়ে বা কোমরের নীচে গুলি করা উচিত। কিন্তু, এভাবে বুকে গুলি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খতম করে দেওয়া কেন? এই প্রশ্নও তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। পুলিশের অবশ্য দাবি, কামরুল ও আনোয়ার তোলাবাজ। গাড়ি চোর। বরাক উপত্যকায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক তোলাবাজি ও গাড়ি চুরির অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। রবিবার তারা পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করায় ‘পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়’। গুলিবিদ্ধ হয়ে তাদের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ক’দিন আগেই অসম সরকারের পক্ষ থেকে গৌহাটি হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়েছিল, ২০২১ সালের মে থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ৫১ জন নিহত হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছে ১৩৯ জন। সেই তালিকায় নব্য সংযোজন কামরুল ও আনোয়ার।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার কামরূপ মেট্রোপলিটন জেলার জোরহাট এলাকা থেকে অসম পুলিশের একটি টিম কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হুসেন ও আবুল হুসেন বড়ভুঁইয়া (২৬)-কে গ্রেফতার করে। তাদের মেঘালয় হয়ে শিলচর আনা হচ্ছিল। সেইসময় কামরুল ও আনোয়ার পুলিশের হেফাজত থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, তারা প্রথমে ওই দু’জনকে থামতে বলেছিল। কিন্তু, তারা কথা না শোনায় পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একজনের বুকে ও পেটে গুলি লাগে। আর দ্বিতীয় জনের পিঠে ও ডান কাঁধে গুলি লাগে। আশংকাজনক অবস্থায় তাদের কালাইনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেন। সেইমতো শিলচর হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তাররা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করে।
স্বাভাবিকভাবেই এই এনকাউন্টার নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, অভিযুক্তরা প্রত্যেকে নিরস্ত্র ছিল। তাই তাদের হাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। ফালে পুলিশ তাদের অন্য অনেক উপায়েই আটকাতে পারত। তাছাড়া তারা যদি সত্যিই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে তাহলে পুলিশ তাদের থামাতে পায়ে বা কোমরের নীচে গুলি করতে পারত। কিন্তু, সেসব না করে বুকে, পিঠে কেন গুলি করা হল?
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়, কোন থানার পুলিশ এই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। গুয়াহাটি পুলিশ ট্যুইট করে জানায়, তিন অভিযুক্তকে ইস্ট গুয়াহাটি পুলিশ ডিßিT্রক্ট (ইজিপিডি)-এর অফিসাররা গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে, কাছারের পুলিশ সুপার রামানদীপ কৌর আবার জানিয়েছেন, তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল শিলচরের পুলিশ। সবমিলিয়ে এনকাউন্টার-ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে।
উল্লেখ্য, অসম পুলিশের অবাধ এনকাউন্টারে যারা নিহত হয়েছে এবং হচ্ছে তাদের মধ্যে এক বড় অংশই হচ্ছে সংখ্যালঘু।