শুভজিৎ দেবনাথ, গয়েরকাটা: ছয় মাসের সিদ্ধার্থের আজ ছিল মুখে ভাত! পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ জানানো শেষ, ভ্যানচালক দাদু তার আদরের নাতির অন্নপ্রাশনের জন্যে কোন কিছুরই খামতি রাখেননি। রাত পোহালেই মুখে ভাত কে কেন্দ্র করে আনন্দের বন্যা বইরে এই বাড়িতে। কিন্তু এই মুখে ভাতের আগেই সব আনন্দ ভাসিয়ে নিয়ে গেল আংরাভাসা নদী।
সোমবার রাতে ভুটান পাহাড়ের বৃষ্টিতে জল বেড়েছে জলপাইগুড়ির গয়েরকাটার আংরাভাসা নদীতে। সেই সাথে জলের স্রোতে নদী পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। আংরাভাসা নদী লাগোয়া কোঙ্গারনগর কলোনিতে সিদ্ধার্থের দাদুর বাড়ি। আর এই বাড়িতেই চলছিল তার মুখে ভাতের তোরজোর। গত দুদিন ধরে দাদু অনন্ত রায় বাজার ঘাট করে রান্নাঘরে মজুত করে রেখেছিলেন ভোজের সামগ্রী।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই নদী লাগোয়া অনন্ত রায়ের রান্নাঘরের একটি অংশ ভেঙে গ্রাস করে নেয় আংরাভাসা নদী।জলের স্রোতে ভেসে যায় অন্নপ্রাশনের জন্য মজুদ করা খাদ্য সামগ্রী! এমনকি ভেসে যায় অন্নপ্রাশনের উপহার হিসেবে কেনা কাঁসার বাসনপত্র! কোন কিছুই আর রক্ষা করা যায়নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে এইরকম দৃশ্য দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রাত পর্যন্ত যেই বাড়িতে হইহুল্লোড়ে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে, আজ সকালে যেনো তার উল্টো ছবি। ইতিমধ্যে আত্মীয়-স্বজনরা আসতে শুরু করেছেন। কে জানতো এমনটা হবে।
এই মুহূর্তে আবার নতুন করে বাজার করবে সেই সামর্থ্য নেই এই দরিদ্র পরিবারের। কাজেই বাতিল করতে হলো আজকের এই অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান। সেই সাথে ফিরে যেতে শুরু করেছে অনুষ্ঠান বাড়িতে আসা আত্মীয়-স্বজনরা। অন্নপ্রাশনের সেই অনুষ্ঠান না হলেও নিয়ম রক্ষার্থে পাশের মন্দির থেকে প্রসাদ মুখে দিয়ে এই রীতি সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন নদী লাগোয়া এই এলাকার বেশিরভাগ লোক দরিদ্র। অনেকেরই ঘরবাড়ি বিপদের মুখে রয়েছে, তবে প্রশাসনের তরফ থেকে কোন হেল দোল নেই। আজকের এই ঘটনার যেরে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাদের দাবি খুব দ্রুত যদি ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা না হয় তবে শুধু রান্নাঘর নয় থাকার ঘর পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
আনন্দ রায়ের স্ত্রী কীর্তিবালা রায় জানান, ” আমাদের বাড়ি আংরাভাসা নদী তীরবর্তী এলাকায়। এদিন নদীর জল বাড়িতে ঢুকে য়াওয়ায় রান্নাঘর ভেঙে গিয়ে নাতির অন্ন্যপ্রাশনের জন্য মজুত করে রাখা সমস্ত জিনিসই জলে ভেসে য়ায়। তাই আমরা সেই অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হই।”