আবদুল ওদুদ: শিল্পের জন্য বাংলা আদর্শ ভূমি। আপনারা বাংলায় বিনিয়োগ করুন। বাংলায় শিল্প গড়ুন। এখানে কোনও শ্রমদিবস নষ্ট হয় না। কোনও ধর্মঘট হয় না। রের্কড পরিমাণে বিদ্যুৎ মজুত রয়েছে। মঙ্গলবার নিউ টাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ৩৫ দেশের প্রতিনিধিদের সামনে এই আহ্বান করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাণিজ্য মঞ্চ থেকেই তিনি প্রচ্ছন্নভাবে গেরুয়া শিবিরকে বার্তা দিয়ে বাংলার বুকে শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য দেশের তাবড় তাবড় শিল্পপতি ও বিদেশি প্রতিনিধি দলের সামনে আহ্বান রাখলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিভেদ পছন্দ করি না। এখানে কোনও বিভেদ নেই। আমরা স্বামী বিবেকানন্দের নীতি নিয়ে চলি। যদি আপনি মনে করেন আপনি দুর্বল, তাহলে দুর্বল হবেন। আর যদি মনে করেন, আপনি শক্তিশালী তাহলে শক্তিশালী।
‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’— কবিগুরুর এই কথাকে পাথেয় করে চলি। গোটা দেশের মধ্যে বাংলা অন্যতম ইকনমিক পাওয়ার হাউস হয়ে উঠেছে। তাই এখানে জমি নিন, আর শিল্প গড়ে তুলুন।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান বৃদ্ধিই আমার সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এর জন্য আমরা মূলত ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের ওপরেই জোর দিয়ে এসেছি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, এবারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ৩৫টি দেশ অংশ নিয়েছে। পার্টনার দেশ হিসেবে অংশ নিয়েছে ১৭টি দেশ। তার মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়ার মতো বিভিন্ন দেশ। গত ৬টি বাণিজ্য সম্মেলন থেকে যে বিনিয়োগ এসেছে, তার ওপরে ভিত্তি করে ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শিল্প প্রকল্প রাজ্যে শুরু হয়েছে। বাংলা আজ দেশের মধ্যে অন্যতম ইকোনমিক পাওয়ার হাউজ। দেশের মধ্যে অন্যতম দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা অর্থনীতি আমাদের। সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা গোটা দেশের মধ্যে এক নম্বরে। চলতি আর্থিক বছরেই ২১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যাবে আমাদের অর্থনীতি। শিল্প ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এখানে। বাংলার জিডিপি-ও বেড়েছে।’ রাজ্যে এখন বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে বলেও এ দিন বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলার সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে মহিলাদের জন্য সমস্ত সামাজিক প্রকল্প করেছি। তার সঙ্গে রয়েছে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, লগ্নির সুখের ঘর বাংলা। বাংলাকে নিজের আপন বাড়ি ভাবুন, সুখের ঘর ভাবুন। কারণ এখানে আমরা বহু বিষয়ে এক নম্বরে রয়েছি। ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে এক নম্বরে আছি। মহিলাদের ক্ষমতায়নে এক নম্বরে রয়েছি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বিনামূল্যে দিই। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকার কার্ড দেওয়া হয়েছে। যার প্রিমিয়াম দিতে হয় না। এখানে কোনও সাম্প্রদায়িকতা নেই। এখানে স্থায়ী সরকার আছে। ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে কর্মসংস্থানের প্রয়োজন, তাই আসুন এখানে বিনিয়োগ করুন। এখানে জমি নিন, আর শিল্প গড়ে তুলুন।’
মমতা ব¨্যােপাধ্যায় বলেন, শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বাংলায়। তাজপুর বন্দর তৈরি হচ্ছে। ঢেউচা পাঁচামি তৈরি হচ্ছে। এখানে সিলিকন ভ্যালি গড়ে উঠেছে। আইটি শিল্প গড়ে উঠছে। বানতলা লেদার কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। এখানে স্কিল রয়েছে। মেধা রয়েছে। এখানে কোনও বিদ্যুতের সমস্যা নেই। ২০২৩ সালের মধ্যেই গ্যাস তৈরির কাজ হবে। বড় গেম চেঞ্জার হয়ে উঠেছে বাংলা। শিল্প গড়ার জন্য এখানে আপনাদের জমি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। আপনারা জমি পাবেন। তার ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি। তাজপুর ব¨র প্রসঙ্গে মমত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এখনকার জন্যে যে কোনও সংস্থা টেন্ডার করতে পারে। ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে তাজপুর ব¨রের বরাত দেওয়া হবে।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে রিলায়েন্স কর্তা মুকেশ আম্বানি বাংলায় যে শিল্প ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করছে সেই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘বেঙ্গলের একটা পোটেনশিয়াল আছে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে যাওয়ার। রিলায়েন্সের জন্য বাংলা একটা বড় বিনিয়োগের জায়গা।’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে ডাকার পর আমি ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমি জানাচ্ছি, আরও ২০ হাজার কোটি টাকা আমি বিনিয়োগ করছি আগামী তিন বছরের জন্য। জিও ফাইবারের মাধ্যমে বাংলার সব বাড়ি ডিজিটাল হয়ে যাবে কয়েক বছরের মধ্যে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য শিল্পপতিরাও বাংলায় শিল্প স্থাপনের পক্ষে জোর সওয়াল করেন। আইটিসির কর্ণধার সঞ্জীব পুরি, হার্ট বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি, আরপিজি কর্তা সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, জেকে পেপারের কর্তা হর্ষপতি সিংহালিয়া, হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, উইপ্রো কর্তা রিষভ প্রেমজি, উমেশ চৌধুরি,রঞ্জন পাই একযোগে বাংলায় শিল্পগড়ার আহ্বান জানান মঞ্চ থেকে। শিক্ষাক্ষেত্রেও বড় বিনিয়োগ করতে চলেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।