সেখ কুতুবউদ্দিন: সরঞ্জাম কিনতে সরবরাহকারীদের টাকা মেটাচ্ছে না আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেছে দুটি সংস্থা। ইতিমধ্যে সেই মামলার শুনানিও হয়েছে। আর এতেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে আলিয়াকে মোট বরাদ্দ করে ৭৯ কোটি টাকা।
ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলিয়াকে সরঞ্জাম কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়। সরঞ্জামও কেনা হয়। সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়ার গেরোয় বিলম্বও হয়।
তাই অর্থ বর্ষের শেষে খরচ না হওয়া ৩৬ কোটি টাকা ফেরত চাওয়া হয়। সেই মতো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু যে সমস্ত যন্ত্রাংশগুলি কেনা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে ২০টির মতো সংস্থাকে এখনও টাকা বাকি রাখা হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে দুটি সংস্থার পক্ষ থেকে প্রাপ্য টাকা পেতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার শুনানিতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হাজিরা দেয়। ইতিমধ্যে ৮টি সংস্থা আলিয়াকে আইনি নোটিশ ধরিয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি সংস্থা আরবিটেশন করে। এই নিয়ে এখন নাজেহাল অবস্থা আলিয়া কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে সরাসরি রাজ্য সংখ্যালঘু দফতরেও অভিযোগ জানানো হয়।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকের বক্তব্য, এই ঘটনায় ফ্যাকাল্টিদের সম্মানহানি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ল্যাবে প্রাকটিস করলেও এখন সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টাকা না দিলে ক্রয় করা যন্ত্রাংশ ফেরত নিয়ে যাবে।
এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। রাজ্যের সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানি রুখতে রাজ্য সরকারের কাছে বিশেষভাবে আর্জি জানিয়েছেন আলিয়ার বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা জানান, বরাদ্দকৃত অর্থে ল্যাবের যন্ত্রাংশ, বুকলেট, বই সহ অন্যান্য সরঞ্জাম টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল শোধ করতে পারেনি আলিয়া কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে যন্ত্রাংশ কেনা হলেও বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ায় সংস্থাগুলিকে বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি আলিয়া কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বার বার চিঠি পাঠাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যার কথা রাজ্য সংখ্যালঘু দফতরের কাছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বার বার চিঠি দিয়ে জানায়।
সংস্থাগুলিও সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবগত করেছে বলে আলিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আবু তাহের কমরুদ্দিন বলেন, দুটি মামলার শুনানি হয়েছে। আলিয়ার তরফ থেকে সব রকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উপাচার্যের দাবি, সংস্থাগুলির বকেয়া মেটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন পড়ুয়ার বক্তব্য, সংস্থাগুলিকে টাকা মেটানো হয়নি, বহু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। সংস্থাগুলিও যন্ত্রাংশ নিয়ে চলে যাবে বলা হচ্ছে। এই অবস্থায় যন্ত্রাংশ না থাকলে ছাত্রছাত্রীরা ল্যাব ক্লাস কীভাবে করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছেন পড়ুয়া ও শিক্ষকরা।