পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির ফায়ারব্রান্ড নেতা যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ অব্যাহত রয়েছে। যোগীর বক্তব্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি। তিনি বলেছেন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ধর্ম নয়, দেশের সমস্যা।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব ও অন্যরা। সোমবার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি নাম না করে মুসলিমদের টার্গেট করে বলেন, ‘এটা যেন না হয় যে কোনো একটি অংশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেশি হবে এবং যারা মূলনিবাসী, তাদের জনসংখ্যা সচেতনতার প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
আদিত্যনাথ বলেন, একই শ্রেণির জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, যেসব দেশে জনসংখ্যা বেশি, সেখানে জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, ধর্মীয় জনসংখ্যার উপর এর বিপরীত প্রভাব পড়ে, তারপর এক সময় বিশৃঙ্খলা হয়, অরাজকতার জন্ম হয়। সেজন্য জনসংখ্যা স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টার সাথে ধর্ম, শ্রেণি, সম্প্রদায়ের সকল দৃষ্টিভঙ্গি সমানভাবে একত্রিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেছেন, জনসংখ্যা থেকে নৈরাজ্যের উদ্ভব হয় না, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধ্বংস থেকে হয়।
সমাজবাদী পার্টির এমপি শফিকুর রহমান বার্ক বলেছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন না করে বিজেপি সরকারের উচিত মুসলমানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। শিশুরা যখন সুশিক্ষা পাবে, তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা আপনা থেকেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে কেন্দ্র করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে নির্দিষ্ট একাংশের ভোট বিজেপি পেতে পারে। সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘যোগীর বক্তব্য উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য। সরকার কখনো মুসলমানদের জনসংখ্যা কমানোর কথা বলে, কখনো বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মুসলমানদের দায়ী করে। দেশের বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি সহ মৌলিক বিষয়গুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি নেতারা ভুল বক্তব্য দিচ্ছেন।’
অন্যদিকে, যোগীর মন্তব্যের পাল্টা জবাবে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, ‘মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে। ২০১৬ সালে মুসলমানদের এফটিআর অর্থাৎ উর্বরতা হার ছিল ২.৬। এখন তা ২.৩-এ নেমে এসেছে। দেশের জনসংখ্যাগত ভারসাম্য অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো।’ ওয়াইসি প্রশ্ন করেছেন ‘মুসলিমরা কী ভারতের আদি বাসিন্দা নয়? যদি আমরা সত্যের দিকে তাকাই, তাহলে শুধুমাত্র জনজাতি অর্থাৎ উপজাতি এবং দ্রাবিড়রাই মূল নিবাসী। উত্তর প্রদেশ কোনো আইন ছাড়াই ২০২৬ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে লক্ষিত উর্বরতা হার অর্জন করবে’ বলেও মন্তব্য করেন ওয়াইসি।