ইনামুল হক, বসিরহাটঃ হাড়োয়ার তাহিরিয়া হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি প্যাথলজি বিভাগের উদ্বোধন হল বুধবার। উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.অরিয়ম কর, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব প্ল্যানিং কনসালটেন্ট দীপা মুখার্জি, পাথলজিক্যাল বিভাগের প্রধান ডা. রিজিয়া সিদ্দিকি, সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সামাদ, বিশিষ্ট সমাজসেবী আলহাজ্ব মাহমুদ সাহেব, আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইসমাইল সাহেব, ডা.সাহির মন্ডল ডা. সুব্রত বিশ্বাস, ডা. অনন্যা দাশ, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ফজলুল হক, ডা.শাকির ইয়াসির খান প্রমুখ। এদিন মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাড়োয়ার বিডিও সমীররঞ্জন মান্না, হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিমল চন্দ্র মন্ডল, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সফিক আহমেদ মাদার, হাড়োয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সিরাজুল ইসলাম, হাড়োয়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বাপ্পা মিত্র, বারাসাত ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোয়ারা বিবি, মাওলানা আমির হাসান প্রমুখ। হাড়োয়ার জ্যাঙ্গালআটি কালিকাপুরে তাহিরিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর একটি ইউনিট তাহেরিয়া হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি প্যাথলজি বিভাগের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সামাদ সাহেব বলেন, ছাত্র জীবন থেকে অনেক স্বপ্ন দেখতাম মানুষের জন্য কিছু করার। পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে আমার সেই সব স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পৌঁছনর সাফল্যের একটি অঙ্গ তাহিরিয়া হাসপাতাল। ২০০০ সালের বন্যার পর অসহায় মানুষের খাদ্য ও বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয় আমার মনকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। তাই তাহেরিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হাড়োয়া আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া কালিকাপুর মাদ্রাসার সঙ্গে তাহিরিয়া সেবা নিকেতন নামে একটি সাধারণ দাতব্য চিকিৎসালয় চালু করি। সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসা পরিষেবা ও ওষুধ দেওয়া হত। ২০০৩ সালে মুম্বাই নিবাসী এক সহৃদয় ব্যক্তির ৫০০ টাকার অনুদানে এই হাসপাতালের ভিত্তিস্থাপনের সূচনা। ২০০৫ সালে তাহেরিয়া হাসপাতাল তার পরিকাঠামো নিয়ে পথ চলা শুরু করে। ইতিমধ্যে এই হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি পরিষেবা, আউটডোর, ইনডোর, অপারেশন বিভাগ, প্রসূতি ও শিশু বিভাগ ,আই সি ইউ, এন আই সি ইউ,কম্পিউটারাইজড চক্ষু বিভাগ এমনকি ক্যান্সার চিকিৎসা বিভাগ সহ সমস্ত রকমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালু হয়েছে। মিলছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর সুবিধাও। সুপার স্পেশালিটি প্যাথলজি ডিভিশনের অত্যাধুনিক মেশিন গুলি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হলো। অনুষ্ঠান সঞ্চালক তথা হাসপাতালের ম্যানেজার মুহাম্মদ মঈনউদ্দিন সরদার জানান, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়় হেমাটোলজি এনালাইজার, বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, সোডিয়াম পটাশিয়াম ক্লোরাইড পরীক্ষার জন্য ইলেক্ট্রোলাইট এনালাইজার, বায়োপসি সেটআপসহ সাত রকমের অত্যাধুনিক মেশিন বসানো হয়েছে যা কলকাতার নামকরা প্যাথলজিক্যাল ল্যাব এর রিপোর্টের মত ভরসা করে চিকিৎসা করা যাবে।সম্পাদক আব্দুস সামাদ জানান, ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে নয়, দুস্থ মানুষের পরিষেবার লক্ষ্যে এই আয়োজন। তিনি আরো জানান, আগামী দিনে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন এর ব্যবস্থা করা হবে ইনশাআল্লাহ। বিডিও সমীররঞ্জন মান্না বলেন, এরকম একটি প্রতিষ্ঠান করবার যে সাহস সামাদ সাহেব ও তার টিম দেখিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। অত্যাধুনিক প্যাথলজিক্যাল পরিষেবা সহ যে চিকিৎসা পরিষেবা এখান থেকে দেওয়া হয় তা আগামী দিনে কলকাতার নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের সমমানের হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত, বাংলার বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আবু তাহের রহ. সাহেবের স্মৃতিতে হাড়োয়ার কালিকাপুরে তাহিরিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর পরিচালনায় ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হাড়োয়া আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম কালিকাপুর মাদ্রাসা। হাফেজ কেরাত ও মাওলানা বিভাগে প্রায়১,৭০০ ছাত্র রয়েছে। এই মাদ্রাসার অধীনে সারা রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫ হাজারের মত মক্তব চলছে। এছাড়াও অসহায় বিধবা, এতিমদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে এই ট্রাস্ট। দরিদ্র এলাকায় পানীয় জল,শৌচাগার নির্মাণ, গৃহনির্মান সহ একাধিক সমাজসেবামূূলক কাজ। তাহিরিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেয়েদের আবাসিকভাবে শিক্ষার জন্য হাড়োয়ার পিলখানায় গড়ে উঠেছে মিল্লাত গার্লস হাই স্কুল। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, সঙ্গে রয়েছে দীনিয়াত বিভাগ। এবছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিিকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে এই আবাসিক স্কুল। আগামী দিনের পরিকল্পনা রয়েছে ছেলেদের সাধারণ শিক্ষার জন্য বালক বিভাগের স্কুল খোলার। সব মিলিয়েে শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিষেবায় মাওলানাা আব্দুস সামাদ সাহেবের উদ্যোগে এগিয়ে চলেছে তাহেরিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি।