পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : দিনটি ছিল ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ সাল। রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে অভিশপ্ত ওই দিনে নৃশংসভাবে খুন হন মালদার পরিযায়ী শ্রমিক আফরাজুল। সেই ভাইরাল ভিডিয়োর কথা মনে পড়লেই পরিবারের প্রতিটি সদ্যসের বুকের ভেতরটা আজও হাড় হিম করা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে।
প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর দিনটিতে বিশেষভাবে আফরাজুলের স্মৃতিচারণ করে পরিবার। চলতি মাসেও নির্দিষ্ট ওই হত্যা-দিবসে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মজলিশের মাধ্যমে আফরাজুলের রূহের মাগফেরাত কামনা করে তার পরিবার।
আফরাজুলের খুনি শম্ভুলাল রেগার এখন জেলবন্দি। শুরু থেকেই পরিবার দোষীর ফাঁসির দাবি জানিয়েছে। রাজস্থানের আদালতে শুনানি শেষ হয়েছে। ধীরগতিতে হলেও বিচারপর্ব চলছে। আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আফরাজুলের পরিবার। এখন পরিবার চায় তার উপযুক্ত শাস্তি।
সেদিনের পুড়িয়ে মারার ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। ধিক্কার রব ওঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। নিহত আফরাজুলের বাড়ি কালিয়াচক থানার জালুয়াবাধাল গ্রাম পঞ্চায়েতের সইদপুর গ্রামে। আফরাজুলের কোনও পুত্র সন্তান নেই। স্ত্রী গুলবাহার বিবি ও তিন মেয়ে বর্তমান। বড় মেয়ে জ্যোৎস্না বিবি, মেজো মাধ্যমিক পাশ রেজিনা খাতুন ও ছোট মেয়ে হাবিবা খাতুন। আফরাজুল বেঁচে থাকতেই দুই মেয়ের বিয়ে হয়। ছোট মেয়ে হাবিবা খাতুন ঘটনার সময় ক্লাস নাইনে পড়ত। এখন কালিয়াচক কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। চরকম আর্থিক সমস্যার মধ্যেও সে এগিয়ে যেতে চায়।
উল্লেখ্য, আফরাজুলের খুনের খবর দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে তুলেছিল। বিজেপি শাসিত রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলায় লাভ জিহাদের অজুহাত খাড়া করে শরীরে লোহার ধারালো যন্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাত করার পর পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আফরাজুলকে। কালিয়াচক থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরের এই গ্রামে যখন নৃশংস খুনের খবর পৌছায় তার আগেই গোটা দেশ এই রোমহর্ষক পৈশাচিক ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায়। দলমত নির্বিশেষে সকলেই আফরাজুলের খুনির বিচার চেয়ে সরব হন। পরিবারও ফাঁসির দাবির পাশাপাশি আইনানুগ শাস্তির দাবি তোলে। ওই সময় অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। আফরাজুলের স্ত্রী মাসে এক হাজার টাকা বিধবা ভাতা পান ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মেজো মেয়ে রেজিনা খাতুনের একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। রেজিনা প্রথমে মালদায় সরকারি হোমে কাজে যোগ দেন, বর্তমানে তিনি সংশ্লিষ্ট কালিয়াচক ব্লকে সাপোর্টিং স্টাফ হিসেবে কাজ করছেন। এই সামান্য টাকায় কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে আফরাজুলের পরিবারের। আফরাজুলের স্ত্রী কয়েক বছর থেকে অসুস্থ। ইদানিং হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। আর্থিক অনটনের সংসারে চিকিৎসার খরচ জোগার করাটা আরও সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
রাজস্থানে থাকাকালীন আফরাজুল পরিবারে মাসে মাসে টাকা পাঠাত। এখন বহু কষ্টে সংসার চলছে বলে জানিয়েছেন আফরাজুলের স্ত্রী। এদিকে রাজস্থানে আফরাজুলের বিচারপ্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। মালদা থেকেও অনেকে সেখানে গিয়ে স্বাক্ষ্য দিয়ে এসেছেন বলে জানান আফরাজুলের স্ত্রী। রাজস্থানে এখনও মালদার বহু শ্রমিক রয়েছেন। এই মামলায় তাঁরাও নানাভাবে সহায়তা করছেন। কুরবানসহ কয়েকজন নেতা তাদের সহায়তা করছেন বলে পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে। খুনি এখন জেলে রয়েছে। আফরাজুলের স্ত্রী জানান, আমাদের আইন ও বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রয়েছে। এর বেশি এখন কিছু বলতে চাই না।