পারিজাত মোল্লা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সরগরম চলছে রাজ্য। এবার এই ঘটনার ঢেউ পৌঁছে গেল কলকাতা হাইকোর্টে । এই ঘটনায় র্যাগিং বিরোধী কমিটির সুপারিশ কার্যকর করার আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দাখিল হলো কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ।
মামলাকারী আইনজীবী রয়েছে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। যাদবপুরে প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বিরোধী কমিটির সুপারিশ কার্যকর করার আবেদন জানানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে ।
চলতি সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্টে কেরল রাজ্যের একটা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আরকে রাঘবন কমিটি কিছু সুপারিশ করেছিল অ্যান্টি র্যাগিং নিয়ে । ২০০৭ সালের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এটা তৈরি করা হয় ।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সেই কমিটির সুপারিশ কার্যকর করার আবেদন জানালেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় । এই রিপোর্টে সিনিয়র জুনিয়রদের আলাদা রাখার কথা বলা ছিল ।এদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে । প্রাক্তন কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে এই রিপোর্ট কার্যকর করার আর্জি জানিয়েছেন ওই আইনজীবী । আরকে রাঘবন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্রদের র্যাগিং নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক কর্তৃপক্ষ । এই বিষয়ে ইউজিসি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক ।
২০৯ পাতার রিপোর্ট দিয়েছিল কমিটি ।এই কমিটির রিপোর্টে বলা ছিল -‘সিনিয়র – জুনিয়র আলাদা রাখতে হবে ।ইউজিসির একটা ফোন নম্বর থাকতে হবে, যাতে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারা যায় ।এই বিষয়ে নিরন্তর সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করতে হবে ।’গত বুধবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের বারান্দা থেকে নীচে পড়ে গুরুতর আহত হন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র । বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের । এই ঘটনায় হস্টেলের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা । তাঁদের অভিযোগ, সিনিয়ররা ওই ছাত্রকে বিবস্ত্র অবস্থায় দৌড়তে বাধ্য করেছিলেন ।
এই ঘটনায় পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃত ছাত্রের বাবা । তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক প্রাক্তনী-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে । ঘটনার পুলিশি তদন্ত এখনও জারি রয়েছে ।ওই ছাত্রের মৃত্যুর পরের দিনের তারিখ দেওয়া ইংরেজিতে লেখা একটি চিঠি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রকে দিয়ে আগের দিনই জোর করে চিঠি লেখানো হয়েছিল। এই চিঠি লেখানোর সময় গ্রেফতার হওয়া তিনজন সেখানে উপস্থিত ছিল বলে খবর। পুলিশ সূত্রে প্রকাশ এই ঘটনার সঙ্গে এই তিনজন ছাড়াও আরও অনেকে জড়িত।ডায়েরির পাতায় লেখা চিঠির হাতের লেখা ও তিন অভিযুক্তর হস্তাক্ষর পরীক্ষা করে দেখতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
পুলিশ সূত্রে প্রকাশ , ধৃতদের ফোন থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বহু চ্যাট হিস্ট্রি। কেনও সেগুলি সরিয়ে ফেলা হল? তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।পুলিশের দাবি, ইন্ট্রো পর্ব চলার সময় প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের হেনস্তার ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছিল গত ৯ অগাস্ট রাতে। হেনস্তার ভিডিও হাতে পেতে ফরেন্সিক ও প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চলেছে কলকাতা পুলিশ ।
লালবাজার সূত্রে প্রকাশ , ধৃত তিনজনকে জেরা করে বাকি ৬ জনের নাম মিলেছে। তাই এবার তাদের তলব করা হয়েছে। ধৃত সৌরভ মেন হস্টেলের প্রভাবশালী বলে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন পড়ুয়া জানান, -‘সৌরভের নামে আগেও ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।