পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ইটভাটার শিশু শ্রমিক থেকে মাস্টার ডিগ্রি। সব কাহিনি হার মানাবে ২৯ বছর বয়সী কর্নাটকের পিছিয়ে পড়া ইরুলার সম্প্রদায়ভুক্ত যুবক ডি শিবকুমারের লড়াইকে।
যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা, হাতে খেলনা থাকার কথা, সেই ছোট্ট হাতে বইতে হত ইট। সাত বছর বয়স থেকেই সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ডি শিবকুমারের। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কর্নাটকের ইরুলার উপজাতি সম্প্রদায়ের কষ্ট।
তামিলনাড়ু-কর্নাটক সীমান্তে এক গ্রামে ইটভাটার শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ দিয়ে শৈশব শুরু। দীর্ঘ ২২ বছরের হাড় ভাঙা খাটুনি। তার পরে মাদ্রাজ ক্রিস্টান কলেজ (এমসিসি) থেকে ডিগ্রির শংসাপত্র পাওয়া। পরে সামাজিক শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করে এমএসডাব্লু কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬৩ শতাংশ। আজ ইরুলার সম্প্রদায়ের কাছে রোল মডেল ডি শিবকুমার।
সাংবাদিকদের সামনে শিবকুমার জানিয়েছেন, এটি আমার কাছে কেবল মাত্র একটি ডিগ্রি নয়, তীব্র দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যে সমস্ত কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিলাম ছোট থেকে, এটা তারই ফলাফল।
প্রচণ্ড দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম হয় ধর্মপুরীর কারাগোর গ্রামের বাসিন্দা শিবকুমারের। জন্মের পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তই ছিল তার কাছে কঠিন। শৈশব বলে কিছু ছিল না তার। যে বয়সে খেলনা নিয়ে ছুটে বেড়ানোর কথা, সেই বয়সে মাথায় চেপেছিল ভারী ইটের বোঝা। ছোট্ট দু হাতে তাকে বইতে হত, ভারী ইট। ইরুলার পরিবারে জন্ম হওয়া শিবকুমারের পরিচয় ছিল শিশুশ্রমিক। তার বাবা ও কাকা ওই ইটভাটায় একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারের আর্থিক দূরবস্থার কারণে তাকে ইটভাটায় কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু কাজে একটু ভুল ত্রুটি হলেই চলত ইটভাটা কর্তৃপক্ষের নির্যাতন।
শিবকুমার জানিয়েছেন, কোনোদিন ভাবিনি এই জীবন থেকে মুক্তি মিলবে। অত ছোট বয়সে জীবন কি তাই প্রথমত বুঝতাম না। জানতাম প্রতিদিন বাবা-কাকার সঙ্গে ইটভাটায় এসে কাজ করতে হবে, আর ভুল করলে জুটবে কর্তৃপক্ষের মার। কিন্তু ২০০৩ সালে জীবনে পরিবর্তন আসে। ১০ বছর বয়সে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু পরিবারের প্রচণ্ড অভাব, তাই আবার ছোটখাটো কাজ শুরু করতে হয়। পরে ওই সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জাতীয় শিশু শ্রম প্রকল্প (এনসিএলপি) স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয়। ১৯ বছর বয়সে দশম শ্রেণী পাশ, ২১ বছর বয়সে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা।
শিবকুমার জানান, তবে লক্ষ্য ছিল সব বাধা অতিক্রম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। কারণ আমি জানতাম শিক্ষাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমি আমার সম্প্রদায়ের জন্য পরিবর্তন আনতে পারি। সামাজিক শিক্ষা নিয়ে স্নাতকোত্তর হয়ে জ্ঞান অর্জন করা আমার অন্যতম লক্ষ্য ছিল। কারণ তা হলেই আমি সমাজের মানুষের অবস্থা বুঝে তাদের জন্য কাজ করতে পারতাম।
শিবকুমার আরও জানিয়েছেন, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ইরুলার পরিবারগুলিতে শিক্ষার আলো নেই। অভাব নিত্যসঙ্গী। পরিবারে ছেলের জন্ম হলে তাকে শিশু শ্রমিকের কাজ করাতে পাঠানো হয়, আর মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে। আমি এবার শিক্ষার মধ্যে দিয়ে সমস্ত কিছু বন্ধ করতে চাই।
এমসিসি কলেজের অধ্যক্ষ পল উইলসন জানিয়েছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ সব সময় উপজাতি অধ্যুষিত এই পরিবারগুলির জন্য কাজ করে চলেছে। তাদের উন্নতির জন্য সর্বদা তাদের পাশে আছে।