পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ কখনও গাছে বেঁধে বেধড়ক মার– কখনও নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে গোটা গ্রাম। আবার কখনও উচ্চবর্ণে প্রেম করার ‘অপরাধে’ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। গোটা দেশেই দলিতদের উপর নির্যাতন বিপদসীমা পার করে ফেলেছে– দ্য ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া রিপোর্ট ২০২০-তে প্রকাশিত রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। আদিবাসী-দলিত সম্প্রদায়ের উপর হিংসাত্মক অপরাধের নিরিখে শীর্ষে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য। মহামারিও দমাতে পারেনি এই অত্যাচার।
গত এক বছরে দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে ৯.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে। উত্তরপ্রদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৫.২ শতাংশ মামলার খবর পাওয়া গেছে। এরপর বিহার ১৪.৬ শতাংশ এবং রাজস্থানে ১৩.৯ শতাংশ– মধ্যপ্রদেশে ১৩.৭ শতাংশ এবং মহারাষ্ট্রে ৫.১ শতাংশ। এই শীর্ষ পাঁচটি রাজ্যে নৃশংসতার ৭২.৫ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে। এই রিপোর্ট আরও প্রকাশ করেছে যে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি কর্মকর্তারা মহামারিকে এসসি এবং এসটির বিরুদ্ধে অত্যাচারের ঘটনা উপেক্ষা করার জন্য ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেননি।
রিপোর্ট অনুযায়ী তফসিলি উপজাতিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার বা অপরাধ ২০২২-এর তুলনায় ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপি শাসনাধীন রাজ্যগুলোতেই এর বাড়বাড়ন্ত। দলিত মহিলাদের উপরেও অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে– নারী নির্যাতনে দেশে শীর্ষে বিজেপিশাসিত অসম।
নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতারা অসমের মহিলাদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এ যাবৎ সেই প্রতিশ্রুতি বিন্দুমাত্র পালন করা হয়নি। অসমের মহিলাদের মধ্যে একটা বড় অংশ যৌন নির্যাতনের শিকার। ২০১৬ সালে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই অসমে নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পরপর চার বছর নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় অসম প্রথমে। এ বছর নারী নির্যাতনের হার ১৫৪.৩– যা জাতীয় গড়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে– এই মহিলারা বিবাহিত হলে তারা স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীর প্রতি অন্যান্য অপরাধের নিরিখে স্বামীর হাতে নির্যাতনের ঘটনা ৩০ শতাংশের বেশি। এছাড়া যারা বিবাহিত নন– এমন মেয়েরা পারিবারিক চৌহদ্দিতে পরিজনদের হাতেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।পরিস্থিতি মুকাবিলায় রাজ্য বিজেপি সরকারের তরফে তেমন কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি নেতারা প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ধ্বজাধারী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের দাবি করেন। এ দিকে বর্তমান সময়ে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে নারীর প্রতি হিংসা উর্ধ্বমুখী।