রেজাউল করিম: আম, রেশমের পর এবার কমলাও মালদার কৃষিতে প্রভাব ফেলতে চলেছে। উদ্যোগীর ভূমিকায় দীপক রাজবংশী। নিজের জমিতে কমলা চাষ করে আপাতত বেশ সফল বলা যায়। মালদা জেলায় কমলা চাষ করে নজির তৈরি করেছেন। যদিও বাণিজ্যিকভাবে এখনই বিক্রি শুরু করেন নি। ভবিষ্যতে ইচ্ছে রয়েছে। এখনও তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বাগানে এবার প্রায় দেড় কুইন্টালের উপর কমলা ফলেছে।
জেলায় কমলা চাষ করে দিশা দেখাচ্ছেন পুরাতন মালদার দীপক রাজবংশী। তাঁর জমিতে ফলানো কমলা বেশ মিষ্টি। নাগপুরের কমলার থেকে খেতে তুলনামূলক সুস্বাদু। এর আগে ছাদবাগানে মাটির টবে কমলা ফলিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু জমিতে ফলিয়ে মিষ্টি কমলা পাওয়ার নজির ছিল না জেলাতে। যদিও এই কমলা আকারে দার্জিলিং কমলালেবুর চাইতে সামান্য ছোট। তাই তিনি এই ফলনে সন্তুষ্ট নন। তবে থেমে নেই দীপক বাবু। কমলার আকার কিভাবে আরও বড় করা যায় তা নিয়ে রীতিমতো পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমির চাষে উৎপাদিত এই কমলা এখনও বিক্রি শুরু করেন নি। আকার বাড়িয়ে তবেই বিক্রির ব্যাপারে ভাববেন বলে জানিয়েছেন।
পুরাতন মালদার গোয়ালপাড়ায় বাড়ির কাছেই নিজের জমিতে বছর চারেক আগে ১০টি কমলার চারা রোপন করেছিলেন দীপক রাজবংশী। নদীয়ার রানাঘাটের এক নার্সারি থেকে ভূটানি প্রজাতির চারাগুলি কিনে আনেন তিনি। রোপনের পরে অবশ্য একটি চারা মারা যায়। বাকিগুলি টিকে যায়। দীপকবাবুর পরিশ্রম ও যত্নে বেশ বড় হয়ে উঠেছে এই কমলাগাছগুলি। একেকটির উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট। গত বছর থেকে ফল দেওয়া শুরু হয়েছে। গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ফুল আসা শুরু হয়। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফল পাকতে শুরু করেছে। একেকটি গাছে ২০-২৫ কেজি করে কমলা পাওয়া যাচ্ছে। সার হিসেবে গোবর সার, ভার্মিকম্পোস্ট, নিম খইলের মিশ্রণ ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন দীপক রাজবংশী। তবে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজের হাতে তৈরি ভেষজ কীটনাশকেই ভরসা তাঁর। কোনও রকম রাসায়নিক কীটনাশক কিংবা সার এখনও ব্যবহার করেন নি। এমনই দাবি দীপকবাবুর।
জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক জানান, ‘খুব ভাল উদ্যোগ। জেলায় নতুন কিছু ফল ফলানো সত্যিই আনন্দের। জেলা উদ্যান পালন দফতর পাশে রয়েছে।’ অন্যদিকে, জেলায় কমলা চাষে দিশা দেখানো দীপক রাজবংশী জানান, ‘স্বাদে মিষ্টি। এ ব্যাপারে কোনওরকম সন্দেহ নেই। কিন্তু আকার নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। গবেষণা চালানো হচ্ছে কিভাবে ফলগুলির আকার-আয়তন বাড়ানো যায়। আকার বড় করেই বিক্রির ব্যাপারে ভাবা হবে।’ তবে এ ব্যাপারে কারও কোনও অভিমত থাকলে সেটা ভেবে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মালদার কমলা চাষি দীপক রাজবংশী। তাঁর কথায়, ‘কোনও পরামর্শ পেলে ভালোই হয়।’