পুবের কলম প্রতিবেদক: আজ ২৭ নভেম্বর গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের শিখ সম্প্রদায় গুরুর বাণীকে প্রচার এবং তাঁর সম্প্রীতির বার্তাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। রবিবার বাংলার শিখ সম্প্রদায়ের প্রথম অনুষ্ঠানটি ছিল শহিদ মিনারে। রবিবার ও সোমবার এখানেই মূল অনুষ্ঠানটি পালিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ এখানে শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ ‘গুরু গ্রন্থসাহেব’ পাঠ করা হচ্ছে, যাকে বলা হয় কীর্তন। বরাবরের মতো এবারও এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বাংলার বিভিন্ন গুরুদুয়ারা সম্মিলিতভাবে। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ এবং হিন্দু পঞ্জাবিরাও এতে অংশ নিচ্ছেন।
এছাড়া রবিবার পার্ক সার্কাস ময়দানে (ডন বসকো স্কুলের উল্টোদিকে) গুরু নানকের ৫৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আইএইচএ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিষ কুমার, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, সাংসদ নাদিমুল হক, আইএইচএ ফাউনেশনের চেয়ারম্যান সতনাম সিং আলুওয়ালিয়া প্রমুখ।
গুরুনাম কীর্তন ‘এক ওঙ্কার’ সতনাম পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টরা গুরুনানকের ঐক্যের বার্তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে দেবাশিষ কুমার বলেন, গুরু নানক ঐক্যের কথা বলেছেন। সবার সমান অধিকার থাকবে, তা শিখিয়েছেন গুরুজী। তিনি আরও বলেন, পার্ক সার্কাসে হিন্দু, মুসলিম, শি’, বৌদ্ধ, জৈন সম্প্রদায়ের মানুষরা একসঙ্গে বসবাস করে। তাঁর কথায়, যে অপর ধর্মকে সম্মান করতে পারে না, সে নিজের ধর্মকে সম্মান করতে পারবে না।
মানুষের মধ্যে ঐক্যের বার্তা উল্লে’ করে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তা রু’তে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গুরুজীর বাণী সম্পর্কে তিনি বলেন, সব সম্প্রদায়ের মানুষকে একত্রিত হওয়ার কথা শি’িয়েছেন গুরু নানক। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশের মানুষকে একত্রিত করেছেন গুরুজী। গুরু নানকের জন্ম হয়েছিল বর্তমান পাকিস্তানের একটি গ্রামে। গুরু নানক অবয়বহীন এক ঈশ্বরের কথা প্রচার করে গেছেন।
আইএইচএ ফাউনেশনের চেয়ারম্যান সতনাম সিং আলুওয়ালিয়া বলেন, শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের পবিত্র গ্রন্থ ‘গুরু গ্রন্থসাহেব’। আহমদ হাসান ইমরানের কথা উল্লে’ করে সতনাম সিং বলেন, গুরুজীর বাণীকে বাঙালিদের কাছে তুলে ধরার জন্য বাংলায় অনুবাদের কথা বলেছেন ইমরান। আমরা ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় গুরু গ্রন্থসাহেব তাঁর হাতে তুলে দেব।
বৌদ্ধ ধর্মের অরুণজ্যোতি ভিক্ষুর বক্তব্য, স্নেহ-মায়া-মমতা ধর্মের সঙ্গে রয়েছে। এই বার্তা দিয়েই মানুষের মন জয় করেছেন গুরুজী। তাঁর দেখানো পথেই আমাদের হাঁটতে হবে।
কলকাতার চিন্ময় মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী দিবাকর চৈতন্য বলেন, একে অপরকে ভালোবাসতে শিখলেই গুরুনানক স্মরণ স্বার্থক হবে। মানবতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের সকলকে নিয়ে চলতে হবে।
মেয়র পারিষদ আমিরউদ্দিন ববি বলেন, গুরু নানকের জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাঁর সম্পর্কে মানুষ যত জানবে। মানুষের চলার পথ সহজ হবে।
বাংলা শান্তির পথ দেখাচ্ছে তা উল্লে’ করেন ইশতিয়াক আহমেদ রাজু। তাঁর কথায়, বিভাজন নয়, বাংলা সম্প্রীতি বজায় রেখে এগিয়ে যেতে চায়।
শিয়া আলেম মুহাম্মদ জাকি বলেন, আমরা সকলে এক মানব পরিবার। তাই সকল মানুষকে একত্রিতভাবে থাকতে হবে। যোগী প্রতীক মজুমদার বলেন, গুরুজী ছিলেন ভালোবাসার প্রতীক।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বামী অচ্যুতান¨ পুরী, এস মুরাদ, হাজি ফাউন্ডেশনের মোখতার আলি, এহেতেশামুল হক, অর্জুন ধাওয়ান, ড. মারিয়া ফার্নান্ডেজ, শিয়া আলেম সৈয়দ মেহের আব্বাস রিজভি প্রমুখ।
গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এদিন ৫৫৪টি দিয়া জ্বালিয়ে গুরু নানককে স্মরণ করেন ও শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত বিশিষ্টরা। মাইকে তখন গুরু নানকের বাণী গুঞ্জরিত হচ্ছে ‘কোই বোলে রাম রাম, কোই বোলে খোদায়ে…’।