পারিজাত মোল্লা: সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বিচার্য মামলাগুলির মধ্যে এসএসসি সংক্রান্ত মামলা গুলির বিচার প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি নিলেন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ শাসক দলের কয়েকজন বিধায়ক জেল হেফাজতে রয়েছেন।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলা গুলিতে তদন্ত চালাচ্ছে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডি।নিম্ন আদালত থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে এইসব মামলা গুলি।তবে গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কে এই বিধ মামলাগুলির দ্রুত নিস্পত্তির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করার নির্দেশ দেয়।বিশেষ বেঞ্চ কে ৬ মাসের মধ্যে মামলার চুড়ান্ত রায়দান এবং দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কে ২ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নুতন বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছেন নিয়োগ দুর্নীতি বিষয়ক মামলা গুলি শুনানির জন্য।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করছে বলে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এসএসসি মামলা ছাড়লেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি এবং ২০১৬ এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলা ছাড়লেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আপাতত এই মামলা গুলিকে তালিকার বাইরে পাঠালেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে প্রথম শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে ।বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হওয়ার পরেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায় রাজ্য জুড়ে । এমনকি শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়েকেও হারাতে হয় শিক্ষিকার চাকুরি।
তবে এবার থেকে এসএসসি সংক্রান্ত কোনও মামলা আর যাবে না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। গত ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তের নির্দেশ দেন অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশের দু’বছর পর সোমবার বিচারপতি গ্রুপ ডি এসএসসি মামলা ছাড়লেন।শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে অসংখ্য মামলা হয়েছিল। যার শুনানিতে কড়া ‘রায়’ দিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে ‘দেবদূত’ হয়ে উঠেছেন বিচারপতি। সোমবার বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, -‘তিনি এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলাই আপাতত আর শুনবেন না ‘।ইতিমধ্যেই এই মামলাগুলি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কারণ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করলেও তথ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে তদন্ত ঠিক মতো এগোচ্ছিল না। যার জন্য একসময় সিবিআইয়ের মতো সংস্থাকে ‘ভোগাস’ বলেছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন এজলাসে জানান, -‘ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলা তিনি শুনবেন না। প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি তাঁর এজলাসেই হবে’। আগামী ২৯ নভেম্বর প্রাথমিক নিয়োগ মামলার শুনানি হবে বলে জানান বিচারপতি। সোমবার বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা ছিল এসএসসি মামলার। কিন্তু এজলাসে বসেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, -‘এসএসসি’র সমস্ত মামলা তিনি আপাতত শুনছেন না’।
আর তাই নির্দিষ্ট মামলাগুলির শুনানির তালিকা থেকে এসএসসি সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সরিয়ে দেন বিচারপতি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একাধিক মামলায় বহু শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। গত ৯ নভেম্বর এসএসসি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত মামলা ফেরত পাঠিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। তার মধ্যে একটি মামলা ছিল বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিলের একটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে। এছাড়া এসএসসি’র আরও কয়েকটি মামলা। সুপ্রিম কোর্ট ওই সব মামলা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে। সোমবার বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই জানান, -‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই এই মামলাগুলিকে তালিকা থেকে সরানো হল’। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, -‘কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করবেন। সেখানেই মামলাগুলির শুনানি হবে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা এবং নতুন চাকরির সুপারিশ-সহ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ডিভিশন বেঞ্চই’।
এরপর কলকাতা হাইকোর্ট প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, -‘এসএসসি নিয়োগ মামলা শুনবে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি সব্বার রশিদির নয়া ডিভিশন বেঞ্চ’। আগামী দু’মাসের মধ্যে সিবিআই-ইডিকে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্ট কে ৬ মাসের মধ্যে দ্রুত মামলার নিস্পত্তি করার নির্দেশিকা রয়েছে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের নুতন বিশেষ বেঞ্চ এইবিধ নিয়োগ দুর্নীতি মামলা গুলির শুনানি শুরু করতে চলেছে বলে জানা গেছে।