আহমদ আবদুল্লাহ: বাংলাদেশে বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচনী কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার সন্ধ্যায় এই ঘোষণা প্রদান করেন।
অনেকেই বলে থাকেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের উৎসব এবং প্রকৃত গণতন্ত্রের পরিচায়ক। তপশিল নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরই অবশ্য ‘উৎসব’ শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশ জুড়ে। এই ‘উৎসব’ করছে আওয়ামি লিগ ও তার দু-একটি সহযোগী দল। তারা এখন টিকিট সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ, সময় তো আর বেশি নেই।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল খালেদা জিয়ার বিএনপি বড় আশা করে আসছিল যে, নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার আগে নির্বাচন কমিশন এবং শাসক আওয়ামি লিগ ভোট নিয়ে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচন ঘোষিত হবে। আর শেখ হাসিনা তাঁর কথা রেখেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন হবে ৭ জানুয়ারি, ২০২৪। ভোট গণনা এবং নতুন সংসদের প্রস্তাবিত শপথগ্রহণের দিনও মোটামুটি প্রস্তুত।
বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলির বক্তব্য ছিল, নির্বাচন হতে হবে অবাধ। তাদের আরও বক্তব্য, এর আগের দু’টি নির্বাচনে ভোট লুট হয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক প্রয়োগ করতে পারেনি। এবারও যাতে তা না হয় তার জন্য বিরোধীরা বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।
এ ছাড়া আগাম নিশ্চিত করতে হবে যে, এবার ‘ভোট ডাকাতি’ হবে না। নিঘণ্ট ঘোষণার পর বিরোধী দলগুলি জানিয়ে দিয়েছে, এই ‘একতরফা’ নির্বাচন তারা মানবে না।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই সংলাপ ও সমঝোতা না করে এক তরফা নির্বাচনে বিরোধী। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার জেনেবুঝেই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বিরোধী দলসমূহ যেমন বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামি এবং ইসলামপন্থী অন্যান্য দল এই তপশিল ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা প্রথম পর্যায়ে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে।
সময়সীমা হচ্ছে রবিবার ভোট ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোট ৬টা পর্যন্ত। কিন্তু এতে বাংলাদেশ রাজনীতিতে খুব বেশি পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ, বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামি এবং ইসলামি দলগুলির মাঠে নামার ক্ষমতা এখন আর খুব বেশি অবশিষ্ট নেই। তারও আবার কারণ রয়েছে। বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামি প্রভৃতি দলের প্রথম সারি ও দ্বিতীয় সারির বহু নেতা-কর্মী কারাগারে আবদ্ধ।
জামিনে মুক্ত অনেকের বিরুদ্ধেই ঝুলছে মামলা। তাদের ভয়, ফের ময়দানে নামলে হয়তো আরও বহু বছর তাদের কারাগারে থাকতে হবে। তাই তপশিল ঘোষণার পর বিরোধীদের প্রত্যাশামতো রাস্তায় নেমে জনগণের ক্ষোভ খুব একটা দেখা যায়নি। তবে হ্যাঁ, কয়েকটি গাড়ি ও বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। হরতালের সময় কী হয়, তা অনেকেই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন।
তবে হরতাল দিয়ে বা অশান্তি করে বাংলাদেশে নির্বাচন, তা সে যে রকমই হোক না কেন বন্ধ করা যাবে না। এ কথা বলেছেন খোদ শেখ হাসিনা। তাঁরা নির্বাচন করবেনই। বিরোধী দলগুলি তাতে আসুক বা না আসুক, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক বা না হোক, বিগত নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামি লিগের পরোয়া নেই।
এ ছাড়া বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে এবং নতুন নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় নেতৃত্ব সমস্যা ভুগছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের হাতে রয়েছে র্যাফ, পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী। এ ছাড়া রয়েছে আওয়ামি লিগের ছাত্র ও যুবদের শক্তিশালী বাহিনী। এদের সবাইকে মাঠে নামালে বিরোধী দলগুলির হাতে মোকাবিলা করার খুব বেশি বিকল্প নেই।
গতবারের নির্বাচন নিয়েও বিরোধী দলগুলি অনেক কথা বলেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ৫ বছরের শাসনকাল পূর্ণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতায় থাকলে সবকিছু করা যায়।
তবে এ কথা ঠিক, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আওয়ামি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচুর ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলগুলি ময়দানে না থাকলে শেখ হাসিনা একতরফা জিতবেন। আর সেজন্য মুজিব-কন্যা প্রস্তুত।
বিএনপি, জামায়াত-ই-ইসলামি-সহ বিরোধী দলগুলির বড় প্রত্যাশ্যা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলি হয়তো অবাধ নির্বাচন করার পক্ষে চাপ দেবে। কিন্তু হাসিনা সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে বোঝা গেছে, তাঁরা মার্কিন চাপকে প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারও হাসিনা সরকারকে রাখারই পক্ষে। তাদের ধারণা, হাসিনা সরে গেলে ভারত বিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।
সব মিলিয়ে এটা এখন নিশ্চিত, এই তপশিল অনুযায়ী যদি নির্বাচন হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু-তনয়া-ই ফের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।