উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,জয়নগর : জয়নগরের বামুনগাছির তৃণমূল নেতা সাইফুদ্দিন লস্কর খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আনিসুর রহমান সহ মোট ৩ জন। নদীয়ার হরিণঘাটা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার আনিসুর রহমান লস্কর ও কামালউদ্দিন ঢালীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।জয়নগরের বামুনগাছির তৃণমূল নেতা খুনের ৭২ ঘণ্টা পর এফআইআরে নাম থাকা সিপিএম নেতা আনিসুরকে গ্রেফতার করলো পুলিশ।
সূত্রের খবর, সইফুদ্দিন লস্করকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিপিআইএম নেতা আনিসুর রহমান লস্কর ফেরার ছিল। তার মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করেই পাকড়াও করা হয় বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়,এদিন আনিসুর রহমান লস্কর ও কামালউদ্দিন ঢালীকে গ্রেফতার করেছে বারুইপুর পুলিশ জেলার এসওজি টিমের পুলিশ। ধৃতদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে।পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়,ধৃত আনিসুর লস্করের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাপ করে হরিনঘাটা ও রানাঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দুজনকো।স্থানীয় সূত্রের খবর, আনিসুর এলাকায় সিপিআইএম নেতা হিসেবে পরিচিত।
তবে সিপিআইএমের দাবি, দলের কোনও পদে নেই তিনি। ভোটের রাজনীতিতেও কখনও নামেননি। সাধারণ কর্মী হিসেবেই দলের কাজ করেন। বারুইপুর পূর্ব বিধানসভার অন্তর্গত বামনগাছি পঞ্চায়েত। তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতা জানান, গত পঞ্চায়েতে বামনগাছি এবং পাশের চালতাবেড়িয়া পঞ্চায়েত দখলে আনিসুরকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন সেই বড় নেতা। কিন্তু দু’টি পঞ্চায়েতে একটি আসনও মেলেনি সিপিআইএমের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখল করে জেতার অভিযোগ ওঠে। সেই থেকেই সাইফুদ্দিনের সঙ্গে আনিসুরের তিক্ততা বাড়ে বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের।
পুলিশ সূত্রে খবর, রানাঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয় আনিসুরকে ও হরিনঘাটা থেকে কামালউদ্দিনকে। তৃণমূল নেতা সাইফুদ্দিন লস্করকে খুনের অভিযোগে এর নামই প্রধানত শোনা গিয়েছিল। বারুইপুর পুলিশ জেলার আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তদের খোঁজে গত কয়েকদিন ধরে নদিয়ার রানাঘাট, হরিণঘাটার মতো জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছিল।আর বৃহস্পতিবার সেখান থেকেই গ্রেফতার হয় আনিসুর লস্কর।
গত সোমবার ভোরে তৃণমূল নেতা সাইফুদ্দিনকে গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। পরিবারের তরফে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তাতে মূলত এই সিপিআইএমের নেতার কথা বলা হয়। আদতে দলুয়াখাকির বাসিন্দা আনিসুর। ওই ঘটনার পর, পাল্টা হামলার অভিযোগ ওঠে দলুয়াখাকিতে। আনিসুর-সহ ১৬ জন সিপিআইএম কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গোটা পর্ব ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় গোটা রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু অভিযুক্ত সিপিআইএম নেতার খোঁজ মেলেনি। যদিও তার মা আবেদা বিবি লস্করের দাবি, পুলিশ যখন তার খোঁজ শুরু করে, তখন ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল আনিসুর। তার পর থেকে আর বাড়ি ফেরেনি।সে কিছু করেনি।
পুলিশ মিথ্যা ভাবে তাকে ফাঁসিয়েছে। প্রসঙ্গত, স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, সাইফুদ্দিনকে যারা খুন করতে এসেছিল তাদের এক জনকে সে দিন গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়। তৃণমূল নেতাকে খুনে জড়িত সন্দেহে পিটিয়ে যাকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, তার নাম সাহাবুদ্দিন লস্কর। সাইফুদ্দিন খুনের ঘটনায় এক অভিযুক্ত সাহারুল শেখকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে এখন ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছে।এদিন বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন,যথেষ্ট প্রমাণের ভিওিতে ও এফ আই এর নাম থাকায় গ্রেফতার করা হয় এদের।
আরো দুটি এফ আই এর ভিত্তিতে তদন্তের কাজ চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ ও এসডিপিওর নেতৃত্বে স্পেশাল টিম এই তদন্তের কাজ চালাচ্ছে।অভিযুক্তদেরকে পুলিশ হেফাজতে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের আসল কারণ অনুসন্ধান করা যাবে। এই কেসে এর আগেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
একজনের মৃত্যু ঘটেছে এবং এদিন দুজনকে গ্রেফতার করা হলো। এফআইআরে নাম থাকা বাকিদের ও সন্ধানে তল্লাশি চলছে।তবে আসল কারণ কি, সুপারি কিলারদের কত দেওয়া হয়েছে,কেন মারা হলো এই নেতাকে সবই জানা যাবে পুলিশের তদন্তে বলে এদিন জানালেন পুলিশ সুপার।