আহমদ হাসান ইমরান: কী অবস্থা এখনও গাজার? যুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার একমাস কেটে গেছে। সারা পৃথিবী টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রত্যক্ষ করছে এই প্রতিদিনের এক হলোকাস্ট, অসহায় নিরীহ মানুষের উপর সর্বাধুনিক বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা দ্বারা আক্রমণ। গাজাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। প্রতিদিন ইসরাইলের কাছে আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন পাঠাচ্ছে মারাত্মক থেকে মারাত্মক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর খবর, মার্কিন কমান্ডো বাহিনীর কয়েক শত সৈন্য এবং সেইসঙ্গে অস্ত্রধারী ও হত্যায় পারদর্শী ভাড়াটে সৈন্যদেরও গাজায় নিয়ে আসা হয়েছে।
গাজা সংলগ্ন সমুদ্রে চলে এসেছে মার্কিন নৌবাহিনীর শক্তিশালী একের পর এক যুদ্ধ জাহাজ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে উচ্চপদস্থ সামরিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা সরজমিনে সব দেখে শুনে ইসরাইলি সেনা ও বিমানবাহিনীকে পরামর্শ দিচ্ছে, কী করে আরও সঠিকভাবে গাজায় হত্যা ও নিধনযজ্ঞ চালাতে হবে!
এসব কোনও কিছুই কিন্তু লুকিয়ে ছাপিয়ে হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল এইসব করছে প্রকাশ্যে। আমেরিকান যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট ও ইসরাইলের দোসর জো বাইডেন ওয়াশিংটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন এক রাজ্যে সফরে গেছেন। বিমানে ওঠার প্রাক্কালে তিনি বলে গেছেন, এখন ইসরাইল কোনও ধরনের যুদ্ধবিরতি করবে না।
হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন কোনও ধরনের যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করে না। কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যা কিছু হচ্ছে পশ্চিমা শক্তিগুলি এবং তাদের পোষা সন্তান ইসরাইল তা করছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে। এই পরিকল্পনা আরব রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে এবং দুনিয়ার সমস্ত মুসলিম দেশ থেকে ধন-সম্পদ লুটপাটের পক্ষে।
ফিলিস্তিনের গাজায় যায়নবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের গণহত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। এখন গাজায় হতাহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১,০৭৮-এর মধ্যে ৪৫০৬ জন ফুলের মতো শিশু, ৩০২৭ জন নারী এবং ৬৭৮ জন বয়স্ক নারী-পুরুষ রয়েছেন। আর মারাত্মকভাবে আহতের সংখ্যা হচ্ছে ২৭,৫০০। এ ছাড়া গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য দফতর থেকে বলা হয়েছে, ২৭০০ জন নারী-পুরুষ এবং ১৫০০ শিশু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে রয়েছে। গাজার ১৩৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২১টি হাসপাতাল, ৪৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, না হয় আক্রমণের ফলে তারা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্ব মোড়ল ও দুনিয়া ব্যাপী হত্যায় পারদর্শী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে দিয়েছে, তারা কোনও ধরনের যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করে না। অর্থাৎ ইসরাইলের এই যুদ্ধাপরাধ, হত্যাযজ্ঞ এবং ২৩ লক্ষ মানুষের একটি জনপদকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার কাজ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে সমর্থন দিচ্ছে। তারা যে প্রথমে ৩-৪ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলেছিল, তা ছিল ধোকা তা এখন বিশেষজ্ঞরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। অথচ এরাই সারা দুনিয়াকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইন মেনে চলার কথা বলে ও যারা তাদের কথা শুনবে না, তাদের উপর অবরোধ আরোপ করে। কিন্তু তাদের এই ফর্মুলা কখনোই ইসরাইলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
রাষ্ট্রসংঘের এক মুখপাত্র শুক্রবার বলেছেন, যদি পৃথিবীতে কোথাও জাহান্নাম থাকে, তা আপনারা উত্তর গাজায় দেখে আসতে পারেন। বোঝা যায়, এই নরসংহারযজ্ঞ কতটা ভয়াবহ এবং কতটা পৈশাচিক।
শাসকরা হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে হাততালি দিলেও খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সব শহরে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভ হচ্ছে ব্রিটেন থেকে শুরু করে ইস্তান্বুল, লাতিন আমেরিকায়। অবশ্য যায়নবাদী ইসরাইল ও ইসলাম-বিদ্বেষী আমেরিকা এই খবরগুলি সম্প্রচার হতে দিতে চায় না। তারা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে খবর প্রকাশের উপর।
বোঝা যায়, জিওনিস্ট ইসরাইলিদের বর্ণিত হলোকাস্ট গাজার নৃশংসতার তুলনায় তেমন কিছুই ছিল না। যদি তাদের কথিত হলোকাস্টের কিছুটাও সঠিক হয়, তাহলে বলতে হবে গাজায় বর্বরতার তুলনায় তা ছিল অনেকটাই কোমল। গ্যাস দিয়ে মারা আর ফসফরাস বোমা দিয়ে হত্যা করার মধ্যে অনেকটাই ফারাক রয়েছে বলে সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন।