আসিফ রেজা আনসারি: প্রায় একমাস ধরে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের উপর নির্বিচারে বোমা-গুলি চালাচ্ছে ইসরাইল। এর প্রতিবাদে বিশ্বের নানান প্রান্তে মিছিল বা সমাবেশ হচ্ছে। সোমবার দুপুরে তেমনই একটি মিছিল ও ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল কলকাতায়। সেই মিছিল থেকেই এবার আমেরিকান কনস্যুলেট অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়তে উলামার সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি।
এ দিন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়তে উলামা-র ডাকে যুদ্ধ-বিরোধী মিছিলে দশ হাজারের বেশি মানুষ সাড়া দেন। দুপুরে টিপু সুলতান মসজিদের পাশে সবাই সমবেত হন। পরে হো-চি-মিন সরণির উদ্দেশ্য মিছিল শুরু হয়। মিছিল কিড স্ট্রিট পর্যন্ত আসার পরেই পুলিশ বাধা প্রদান করে। ফলে সেখানেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা।
পরে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল হো-চি-মিন সরণিতে অবস্থিত আমেরিকান কনস্যুলেটের অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ দিকে রাস্তার উপরেই সমবেত জনতাকে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে জমিয়ত নেতৃত্ব। একেবারে সমাবেশের আকার ধারণ করে গোটা মিছিল। এখানে বক্তব্য রাখেন জমিয়ত নেতারা।
মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, হাজার হাজার ফিলিস্তিনির উপর বোমা-গুলি নিক্ষেপ করছে ইসরাইল। তারা মানবতার শত্রু। তিনি উল্লেখ করেন, পিএলও-র নেতা ইয়াসির আরাফত যখন কলকাতা এসেছিল তখন তাঁকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল জমিয়ত। ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষের প্রতি ভারতের সমর্থন ও সংহতি বরাবরই রয়েছে। সেই ধারা মেনেই জমিয়ত ফিলিস্তিনের হয়ে এবং শান্তির পক্ষে রাস্তায় নেমেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা আমেরিকান কনস্যুলেটে বলে এসেছি পুলিশ আপনাদের জানিয়ে দেবে, আমরা তিন দিনের জন্য বিক্ষোভ অবস্থান করব। আমাদের আন্দোলন নিয়ে বাংলার জনমানসে চর্চা হবে। ইসরাইলের বর্বরতা বন্ধ করতেই হবে। তিনি ইসরাইলি পণ্য বয়কটেরও ডাক দেন। এর জন্য ১০ জনের এক-একটি টিম তৈরি করে অঙ্গীকারপত্রের মাধ্যমে মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান করেন নেতাদের। কতটা কাজ হল, মাসে মাসে জেলা কমিটি এর মূল্যায়ন করবে বলেও জানান সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি।
মুফতি আবদুস সালাম বলেন, আমরা জনগণের মনের কথা শোনাতে রাস্তায় নেমেছি। ফিলিস্তিনের অসহায় নারী, শিশুর জীবনকে যেভাবে ইসরাইল বিপন্ন করে তুলছে তার নিন্দা জানিয়ে আমরা যুদ্ধবিরতির দাবিতে সরব হচ্ছি। অন্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের নীতি ছিল ফিলিস্তিনের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলছেন, এখন যুদ্ধের সময় নয়, ফলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভারতের ভোট না দেওয়া বেদনার ও নিন্দাযোগ্য।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলি জানান, তাঁরা বিশ্বমানবতার পক্ষে মিছিল করছেন। গণহত্যা বন্ধের জন্য লড়াই জারি থাকবে। অন্যদিকে মাওলানা হাসানুজ্জামান বলেন, ইসলাম ধর্মের পবিত্র মসজিদ রক্ষার জন্য মুসলিমরা শেষপর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে থাকবে। মাওলানা সাহাবুদ্দিন জানান, ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা যেমন লড়াই করেছেন, তেমনি আল-আকসা মজসিদ রক্ষার জন্য এবং জালিম ইসরাইলের জুলুম বন্ধের জন্য তাঁরা ময়দানে থাকবেন।
প্রসঙ্গত, কলকাতা ছাড়াও বহু জেলা থেকে আলেম-উলামা, ছাত্র-শিক্ষক ও বহু মহিলা এ দিনের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। আমেরিকান কনস্যুলেটে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির সঙ্গে ছিলেন মাওলানা বদরুল আলম, মুফতি ইবরাহিম, হাফিজ আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা আবদুস সামাদ।