পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ গত ৪ বছরে সিবিআই ও ইডি যতগুলি মামলা করেছে তার ৯৫ শতাংশই বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে। শুক্রবার অসমের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির একটি ফোরামের তরফে এমনই দাবি করা হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, কেন্দ্রে মোদি সরকারের শাসনকালে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি এমন একটি মামলাও করেনি যেখানে বিজেপির কোনও নেতার নাম রয়েছে। অথচ, যখন কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির তরফে এমন বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছিল যেখানে কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলির নেতাদের নাম ছিল।
অসমের ১৫টি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের ফোরামের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে দমন করতে সিবিআই ও ইডিকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। এই প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অসম তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান রিপুন বোরা অভিযোগ করেন, সিবিআই ও ইডি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি স্বায়ত্তশাসিত তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে এনডিএ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে বিজেপি তাদের ‘হাতের পুতুল’ করে রেখেছে এবং সেগুলি তারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
উল্লেখ্য, অসমে ১৫টি বিরোধী দলের এই ফোরামের মধ্যে তৃণমূল ছাড়াও অন্যান্য দলগুলির মধ্যে রয়েছে—কংগ্রেস, এনসিপি, অসম জাতীয় পরিষদ, সিপিআই, সিপিআই(এম) এবং রায়জোর দল। বোরার বক্তব্য, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইডি ও সিবিআইয়ের তরফে করা মামলাগুলির ৯৫ শতাংশই বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ছিল। এই সময়ের মধ্যে পদ্ম বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মোট ১২৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩৪টি মামলা শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। ২৪টি মামলা কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে। আর ১১টি মামলা হয়েছে এনসিপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, ২০১৪-২০২৩ সময়কালে কোনও বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ইডি বা সিবিআই মামলা নথিভুক্ত করেছে এমন কোনও নজির নেই। বরং, বিজেপির যে নেতাদের বিরুদ্ধে অতীতে এই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি মামলা করেছিল সেগুলিকেও এখন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলি নিয়ে নতুন করে তদন্তে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি। এই প্রসঙ্গে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নারায়ণ রানে এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। এই নেতাদের বিজেপির ‘ওয়াশিং মেশিনে’ পরিস্কার করা হয়েছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, অভিষেক,কেজরিওয়াল, ফারুক আবদুল্লাহ সহ ৫৬জন বিরোধী নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার বা তাদের সম্পত্তিতে হানা দেওয়া হয়েছে। এগুলি স্পষ্টতই বিজেপির প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রমাণ করে। অন্যদিকে, কেন্দ্রে ইউপিএ শাসনের ১০ বছরে সিবিআই ও ইডি রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মোট ২৬টি মামলা করেছিল। তাব মধ্যে ১৪টি ছিল বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে। আর বাকিগুলি ছিল কংগ্রেস বা তার সহযোগী নেতাদের বিরুদ্ধে।
বিরোধী নেতাদের সমন পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এমন সময় তলব করা হচ্ছে যখন রাজ্যগুলিতে নির্বাচনের প্রচার চলছে। রাজস্থানে কংগ্রেসের বৈভব গেহলটকে রাজস্থান নির্বাচনের প্রচারের সময় ডাকা হয়েছিল। আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠানো হয়েছিল যখন পশ্চিমবঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ জনসংযোগ কর্মসূচি চলছিল। যখনই বিরোধী দলগুলির তরফে কোনও বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হয় তখনই তাদের নেতাদের ইডি বা সিবিআইয়ের তরফে তলব করা হয়। এটা আসলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে তাদের দূরে রাখার স্পষ্ট কৌশল।