মোকতার হোসেন মণ্ডল: বারুদের গন্ধ আর রক্তের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে ফিলিস্তিন। যুদ্ধের সমস্ত নিয়ম ভঙ্গ করে বর্বরতার চুড়ান্ত সীমা অতিক্রম করছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। ইসরাইলের অমানবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে গোটা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ পথে নেমেছে। ইউরোপে ফিলিস্তিনের সমর্থনে মিছিল হচ্ছে। অতীত ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ভারতবর্ষের মানুষও ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছে।
দেশের অন্যান্য শহরের মতো কলকাতাতেও ইসরাইলের অমানবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে মানুষ। ইতিম্যেই বেশ কিছু মিছিল হয়েছে। এবার নভেম্বরের শুরুতে লক্ষাধিক লোকের দুটি বড় বিক্ষোভ মিছিল হতে যাচ্ছে শহরে। এমনটাই জানাচ্ছেন আয়োজক সংগঠনের নেতারা। ২ নভেম্বর দুপুর পর মৌলালি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হবে। সভা হবে ধর্মতলায়। অন্যদিকে ৩ নভেম্বর টিপু সুলতান মসজিদ থেকে আরেকটি মিছিল শুরু হয়ে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে যাবার কথা।
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেভাবে কলকাতায় ঐতিহাসিক মিছিল হয়েছিল সেই রকম লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে ২ নভেম্বর ফিলিস্তিনের জন্য বড় সমাবেশ হবে।
তার মন্তব্য, ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষের উপর ইজরায়েল নির্বিচারে অত্যাচার বাড়িয়ে চলেছে, এমনকি মসজিদে আকসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, হাসপাতালে লাগাতার হামলা চলছে, শিশুদের মৃত্যুর মিছিল চলছে- এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আমরা জোরদার আন্দোলন করার জন্যই কলকাতার রাস্তায় নামতে চলেছি। এর মাধ্যমে আমরা আমেরিকা ও ব্রিটেনকেও বার্তা দিতে চাইছি যে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না।
আবার জমিয়তে আহলে হাদীসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার জানান, ফিলিস্তিনের উপর ইজরায়েলি আক্রমনের বর্বরতা চরম সীমায় পৌঁছে গেছে, ইজরায়েল মানবতা বিরোধী কাজ করছে, এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা প্রতিটা মানুষের মানবিক কর্তব্য। সেই মানবিক তাড়না থেকেই আমরা অনেক বড় আন্দোলন করতে চলেছি কলকাতায়।
জানা গেছে, ফুরফুরার বেশ কিছু পীরজাদা ছাড়াও বহু ঈমাম, মুয়াজ্জিন সংগঠনের নেতা ২ নভেম্বরের বিক্ষোভে অংশ নেবেন।অন্যদিকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ৩ নভেম্বর বিক্ষোভে নামছে ফ্রেন্ডস অফ প্যালেস্টাইন নামে একটি মঞ্চ। রেড রোডের ইমাম ক্বারী ফজলুর রহমান ছাড়াও ওই বিক্ষোভ মিছিলকে সমর্থন দিয়েছেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা: মশিহুর রহমান, জমিয়তে আহলে হাদীসের মাওলানা মারুফ সালাফী, শিয়া নেতা মাওলানা মেহার আব্বাস রিজবী, মাওলানা আসলাম মিনাই, মাওলানা খালিদ আজম হায়দারি সহ অনেকে।
জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সাদাব মাসুম জানান, বিভিন্ন সংগঠন মিলে কলকাতায় একটা বড় সমাবেশ হবে।বন্দি মুক্তি কমিটির নেতা ছোটন দাস বলেন, বর্বরতার সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে ইসরাইল। সমস্ত বিশ্বে বড় বড় বিক্ষোভ প্রদর্শন হচ্ছে ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে। কিন্তু কলকাতায় তেমন বড় কোনো আন্দোলন সংগঠিত হয়নি, সেজন্য আমরা বাংলায় প্রায় সমস্ত মুসলিম সংগঠন সহ মানবাধিকার সংগঠন গুলি মিলে একটি বৃহৎ আকারে ফিলিস্তিনের সমর্থনে সমাবেশ করতে চাই। পশ্চিমা বিশ্বকে বার্তা দিতে চাই যে আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ করুন।
মানবাধিকার কর্মী ছোটন দাস আরও জানান, ফিলিস্তিনের জনগনের এটি স্বাধীনতার সংগ্রাম, ফিলিস্তিন একটি দেশ ছিল মার্কিন এবং ব্রিটিশ মদতে দেশটাকে দুই টুকরো করা হয়েছিল, ইজরায়েল অবৈধভাবে প্রতিষ্টা করা হয়েছিল পরবর্তীকালে পশ্চিমাদের মদতে গোটা দেশ থেকে ফিলিস্তিদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
তার মন্তব্য, এটা ফিলিস্তিনের জনগনের স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই। সারা পৃথিবীর মানুষ তথা ভারতবর্ষের মানুষ তাদের পক্ষে আছে যদিও ভারত সরকারের এতদিনের ঘোষিত অবস্থান পরিবর্তন করেছে মোদি সরকার, তারা সরাসরি ইজরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে কিন্তু ভারতের জনগন স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষে আগেও ছিল আজও আছে।
কলকাতার মুসলিম বুদ্ধিজীবী আব্দুল আজিজ মনে করেন, পশ্চিমা বিশ্বের মদতেই ইসরায়েলের জন্ম এবং তাদের সমর্থনেই তারা আজকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, এটা অবিলম্বে বন্ধের প্রয়োজন।