পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: চলছিল খ্রিস্টানদের একটি গোষ্ঠী (যিহোবা)-র প্রার্থনাসভা। উপস্থিত ছিলেন কমপক্ষে ২২০০ লোক। হটাৎই বিকট শব্দ। তারপর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণ। মুহূর্তে বারেবারে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। প্রাণভয়ে তখন যে যেদিকে পেরেছে ছুটতে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ধারাবাহিক এই বিস্ফোরণে ১জন নিহত। জখম ৪০জন। আশংকাজনক ৭জন। তাদের কালমাসেরি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২জনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
এমন একটি সময় এই বিস্ফোরণটি ঘটল যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন গাজায় ইসরাইলি হানার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন এবং ইসরাইলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছেন। একদিন আগেই আবার কেরলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আয়োজিত একটি মিছিলে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন হামাস নেতা খালেদ মাসাল। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে অনেক। তারপরই এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা। এই এলাকাটি আবার সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার শক্ত ঘাঁটি। এদিকে, এর্নাকুলামের কালামাসেরি এলকায় এই বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত করতে সেখানে পৌঁছেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ ও এনএসজি-র অফিসাররা। ঘটনাস্থলে রয়েছে কেরল পুলিশও। তবে, পিএফআইকে অতীতে কখনও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতায় জড়িত থাকতে দেখা যায়নি। তাই এই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহার করা হয়েছিল। যে কারণে বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল বেশি।
কালামাসেরি এলাকায় একটি কনভেনশন সেন্টারে তিনদিন ধরে চলছিল খ্রিস্টানদের যিহোবা গোষ্ঠীর প্রার্থনাসভা। রবিবার ছিল শেষ দিন। ফলে ভীড় একটু বেশিই ছিল। স্থানীয়দের মতে, ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রথম বিস্ফোরণটি হয় সেখানে। তারপর আরও ২টি বিস্ফোরণ হয়।
পুলিশ কনভেনশন সেন্টারটি ঘিরে রেখেছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। সেই কারণেই বিস্ফোরণের তীব্রতা বেশি ছিল। বিস্ফোরণস্থল থেকে ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিন তারের টুকরো পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। কেরল পুলিশের ডিজি জানান, ‘তদন্তে নাশকতা সহ সব ধরনের সম্ভাবনার কথাই মাথায় রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ‘সিট’ গঠন করা হতে পারে।’ আহতদের চিকিৎসার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ। সব হাসপাতালকে তৎপর থাকতে বলেছেন তিনি।
ছুটিতে থাকা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সবটা খতিয়ে দেখা হবে।’ এদিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে বিজয়নের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এছাড়া, ঘটনা নিয়ে এদিন শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক করেন। ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। উল্লেখ্য, আনন্দ বোস নিজে জন্মসূত্রে কেরলের বাসিন্দা।