আহমদ হাসান ইমরান
গাজাতে নিহতের সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়ে গেছে। ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ বাসস্থান গাজা যাকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিশ্বের সবথেকে বড় উন্মুক্ত কারাগার বলা হয়, সেখানে শুক্রবার ১৩তম দিনেও ইসরাইল ও আমেরিকার নৃশংস বোমা বর্ষণ থামেনি। আর সেইসঙ্গে গাজায় বেড়ে চলেছে লাশের মিছিল। সবথেকে বড় কথা, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, বলেন গণতন্ত্রের কথা, কোথাও কোনও দেশের একজন নাগরিককে ফাঁসিতে ঝোলানো হলে যারা মিডিয়াতে দুনিয়া কাঁপিয়ে দেন, গাজার এই মৃত্যুমিছিলে তাঁরা গায়েব। টিভির পর্দায় বসে তাঁরা দেখছেন, কীভাবে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের হত্যা করছে ইসরাইল। যেন মুসলিমরা মানুষ নয়। একজন ইসরাইলি মন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, তাঁরা গাজার লড়াকু মুসলিমদের নির্মমভাবে হত্যা করবেন এখন এবং সংঘাত শেষ হওয়ার পরও তাঁদের এই হত্যাযজ্ঞ জারি থাকবে। কারণ, ওই জায়নবাদী মন্ত্রীর মতে, গাজার মুজাহিদরা মানুষ নয়, তারা নাকি পশু।
এদিকে আমেরিকাতে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব মারাত্মক মারণাস্ত্র লাগাতার সরবরাহ করছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। আমেরিকার একজন বড় কর্মকর্তা এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। বিভিন্ন সামরিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে বিধ্বংসী বোমাটি গাজার আল আহলি হাসপাতালে ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭০০-র বেশি মানুষ লাশে পরিণত হয়েছেন, তার নির্মাতা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর কোনও দেশই এত ভয়ংকর বোমা যা আবার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য বিশেষ গাইডেড বসানো থাকে তা আমেরিকাই নির্মাণ করে থাকে। এছাড়া ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেশ কয়েকবার ফোন করে ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বলেছে, হাসপাতাল খালি কর, নইলে পরে আমাদের ভয়ংকর আক্রমণের শিকার হবে। আর সেটাই ঘটেছে। তবে হাসপাতালে বোমা বর্ষণ সমস্ত ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। একটু বেকায়দায় পড়ে বাইডেন ও নেতানিয়াহু বলতে থাকেন, হাসপাতালে এই বোমা মেরেছে ইসলামি জিহাদ।
তাহলে বলতে হবে, ইসলামি জিহাদ সংগঠনটি কি করে এই ধরনের অতিশক্তিশালী বোমা হাতে পেল? তবে কি আমেরিকাই ইসলামি জিহাদকে এই বোমা সরবরাহ করছে? তাই বিশ্ব মোড়ল আমেরিকাকে একদিন অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
ইসরাইল যাদের হত্যা করছে তাদের মধ্যে হামাস যোদ্ধার সংখ্যা খুব কম। যারা নিহত হচ্ছে তার অধিকাংশই ফিলিস্তিনি ঈমানদার মুসলিম নারী ও শিশু। এদের মাথা গুঁড়িয়ে দিয়ে হত্যা করে অপার আনন্দ পাচ্ছে জায়নবাদী দখলদার ইহুদিরা। তারা নিশ্চিত, কারণ তাদের সঙ্গে রয়েছে একমাত্র সুপার পাওয়ার আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি পশ্চিমা মুলুক। খবর পাওয়া যাচ্ছে, গাজায় যে ৪০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শিশু।
এদিকে ইসরাইলের বশংবদ মিশরের শাসক এল সিসি বলছেন, ইসরাইল তো আমাকে স্পষ্ট করে কোনও সবুজ সংকেত দিচ্ছে না। দিলে আমি রাফা সীমান্ত খুলে দেব এবং যে সমস্ত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ট্রাকগুলি সীমান্তে অপেক্ষা করছে তাদেরকে গাজায় যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেব। আর এদিকে লক্ষ লক্ষ গাজার বেসামরিক মানুষ শিশু, নারী, বৃদ্ধ, আহত, অসুস্থতরা বিনা খাদ্যে, বিনা পানিতে, বিনা ওষুধে খোলা আকাশের নিচে তিলে তিলে মারা যাচ্ছে। আর পশ্চিমারা এইসব মুসলিমদের মৃত্যু টিভিতে দেখে সেলিব্রেট করছে।
তবে একটা বিষয় ফিলিস্তিনের মুক্তিযোদ্ধা হামাস প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী হলেও ইসরাইলের মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে। এখনও ইসরাইল শত শত ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র, কামান, বিমান প্রভৃতি নিয়ে গাজার সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু ভিতরে ঢুকতে সাহস করছে না। কিন্তু কেন? এত দক্ষ এত শক্তিশালী বাহিনী এত অস্ত্রের ভান্ডার নিয়ে গাজায় ঢুকতে সাহস করছে না করা ভয়ে? একজন ইসরাইলি মন্ত্রী সেনাদের বলেছেন, তোমরা একদিন গাজায় নিশ্চয়ই ঢুকবে।
আর একটি বিষয় হচ্ছে যে মুসলিম দেশগুলির বেশিরভাগ শাসক হচ্ছে জোর করে ক্ষমতা দখল করা রাজা-বাদশাহ কিংবা স্বৈরাচারী সেনা নায়ক। যাদের জনগণের শক্তিকে প্রবল ভয়। কিন্তু ইসরাইলের এই নৃশংস, নিষ্ঠুরতা দেখে মুসলিম জনগণ শাসকদের বাধা উপেক্ষা করে মিশর, ইরাক, তুরস্ক-সহ বিভিন্ন দেশে বিশাল ধিক্কার মিছিল বের করেছে। পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশও শুক্রবারে জুম্মার নামাযের পর বড় বড় মিছিল বের করেছে সারা দেশজুড়ে। কিন্তু বাংলাদেশী মিডিয়াতে রহস্যময় কারণে তার খবর খুব একটা প্রকাশিত হচ্ছে না। তবে বিশ্ব যে ক্রমশই দখলদার জিওনিস্টদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে, আর ইসরাইলের অস্তিত্ব যে আরও সংকটের মধ্যে পড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।