পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে হামাস। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ৫ হাজারেরও বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় শণিবার ইসরাইলের পাশে দাঁড়ালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স হ্যান্ডলে মোদি লেখেন, ‘ইসরায়েলের ওপর জঙ্গি হামলার খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নিরাপরাধ পরিবারগুলির জন্য প্রার্থনা করছি। কঠিন সময়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছি আমরা।’ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘জনগণের দখলদার সৈন্যদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’ গাজা থেকে রকেট হামলা শুরুর ৫ ঘণ্টা পর জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জনগণ, আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি, কোনো অভিযান নয়, উত্তেজনা নয়, কেবল যুদ্ধ।’
পশ্চিম তীর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করার বিষয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে রাজধানী ইসলামাবাদে আলাদা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেইন এই অঙ্গীকারের কথা স্বীকার করেন।
নরেন্দ্র মোদি যেভাবে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ালেন তা পরাধীন এবং স্বাধীন ভারতে বেনজির। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনকে গায়ের জোরে দমিয়ে ব্রিটেন ও আমেরিকার সাহায্যে তৈরি হয়েছিল ইসরাইল। ১৯৪৮ সাল থেকে তারা জুলুম করে একটু একটু করে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করে চলেছে। ফিলিস্তিনিরা আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও তারা পশ্চিমা মিডিয়াকে পাশে রেখে ফিলিস্তিনিদের জঙ্গি সাব্যস্ত করে আসছে এতদিন ধরে। কারণে অকারণে ফিলিস্তিনি হত্যাকে নিজেদের অধিকারের পরিণত করেছে ইসরায়েল। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। তারা মার্কিন বলে বলীয়ান। মার্কিন অর্থনীতিতে ইহুদি লবির বিরাট ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন পদলেহনকারী দেশগুলিও ফিলিস্তিনের পক্ষে আওয়াজ তোলে না। তবে ইসরাইলের নির্লজ্জ জঙ্গিবাদকে কস্মিনকালেও সমর্থন করেনি ভারত। এদিন তাই করে দেখালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইসরাইলের এই আগ্রাসন মহাত্মা গান্ধি এবং নেহরুর মত ব্যক্তিত্বরা কোনোদিন সমর্থন করেননি। বন্দুকের নলকে সামনে রেখে ২০০০ বছর পর ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে উদয় হয়ে ইহুদিরা হঠাৎ এসে বলল, এটি তাদের সম্পত্তি। তা মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। কিন্তু পশ্চিমা বলে বলীয়ান ইসরায়েল সেসবের তোয়াক্কা করেনি।
যখন ফিলিস্তিনের ভুখন্ড দখল করে ইসরায়েল বানানোর চেষ্টা চলছিল, তখন মহাত্মা গান্ধি বলেছিলেন,যেভাবে ফিলিস্তিনকে বন্দুকের নলে দাবিয়ে রেখে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের তোড়জোড় চালানো হচ্ছে তা তাঁর পছন্দ নয়। ইসরাইলের আগ্রাসনে নিজের ভূমিতেই পরবাসি হয়ে যান ফিলিস্তিনিরা। সেদিন ভারত ছাড়াও নির্জোট আন্দোলনের শরিক বিশ্বের বহু শান্তিকামী দেশে ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সহানুভূতি দেখিয়েছিল। ১৯৭৪-এ পিএলও-কে ভারত স্বীকৃতি দিয়েছিল। রাষ্ট্র না হয়েও পিএলও নির্জোট আন্দোলনের দেশগুলির জোটে এল। নেহরু সরকারের সময় থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল ভারতের।
১৯৯২ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে পুরোদস্তুর কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হয় প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও সরকারের আমলে। ’৯২-এ ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের পুরোদস্তুর কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০ কোটি ডলার থেকে ২০০২ সালে পৌঁছয় ৪০ কোটি ডলারে। পরে অবশ্য ভারতের কাছে প্রতিরক্ষার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে প্রযুক্তি। তা সে কৃষির জন্যই হোক বা সাইবার ক্ষেত্রে।
দেশের বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছিল পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে তাদের ওপর সাইবার নজরদারি চালাচ্ছে মোদি সরকার। ২০১৭ সালেই ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল ভারত, চাঞ্চল্যকর এই দাবি ছিল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের।
বুলডোজার দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণনাও গেরুয়া শিবির পেয়েছে ইসরায়েল থেকে। ফিলিস্তিনিদের ওপর এই বর্বোরচিত হামলা শুরু করেছিল তারাই। আজ গেরুয়া শাসিত বহু রাজে তারই অনুকরণ চলছে। ২০০৩ সালে ভারতের অনলাইন রেডিফ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ভারতের বৈদেশিক বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস উইংয়ের (র) সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রয়েছে মোসাদের। ২০০৬ সালে ছ’দিনের সফরে ভারতে এসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘বৈপ্লবিক নেতা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার ইসরায়েল সফরের কথা মনে করিয়ে মোদি বলেছিলেন, ‘১২৫ কোটি ভারতীয়ের শুভেচ্ছা নিয়ে ইজরায়েল যাই। বদলে সেখানকার মানুষের স্নেহ আর উষ্ণতা পেয়েছি বন্ধু বিবি-র সৌজন্যে।’ জবাবে বিবিও বলেছেন, ‘আমার বন্ধু নরেন্দ্র, কখনও যদি যোগাসনের ক্লাস করাতে চাও, আমি ঠিক পৌঁছে যাব। যদি খুব কষ্টকর কোনও আসনও হয়, আমায় ডাকতেই পারো।’
প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েল সফর করে মোদি আসলে গেরুয়াবাদি এবং সংখ্যালঘুদের কাছে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছিলেন। যাদের উদ্দেশে মোদি এই বার্তা দিয়েছিলেন গত প্রায় ১ দশক ধরে সেই বার্তা অসুবিধা হয়নি তাদের। তাই মোদির ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানো বেনজির হলেও তা বিস্ময়কর নয়। এমনটাই বলছেন অনেকেই।