পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক শেষে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজ্যপাল ১০০দিনের কাজের বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি উনি (রাজ্যপাল) কলকাতায় আসবেন বলে জানিয়েছেন। কলকাতায় এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন।
রাজ্যপাল মেনে নিয়েছেন যে, আমরা যে দাবি করছি তা মানুষের দাবি।’ রাজ্যপাল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আপকামিং লিডার’ (ভবিষ্যতের নেতা)-এর আখ্যা দিয়েছেন বলে দাবি করেন কল্যাণ। কল্যাণ অবশ্য এটাও বলেন যে, রাজ্যপাল তাঁদের বলেছেন কোনও ‘রাজনৈতিক বাধা’ না থাকলে তিনি বকেয়া মেটানোর চেষ্টা করবেন। আর ‘বাধা’ এলে তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না। আর এই ‘বাধা’র বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বাধা’র কথা বলে রাজ্যপাল আসলে এটাই বোঝাতে চাইলেন, বঙ্গ বিজেপি যদি বাধা না দেয় তাহলে বকেয়া আদায়ে তিনি চেষ্টা করবেন। উল্লেখ্য, শনিবার তৃণমূলের তিন প্রতিনিধির একটি টিম দার্জিলিঙে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন।
রাজ্যপাল আগেই বার্তা দিয়েছিলেন, তৃণমূলের প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে উত্তরবঙ্গে এসে দেখা করতে পারে। সেইমতো শনিবার রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রওনা দিয়েছিলেন তৃণমূলের ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেই দলে ছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় , সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান তাঁরা। দিল্লি থেকে ফিরে বিকেল সাড়ে ৫টায় দার্জিলিঙের রাজভবনে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল। দার্জিলিঙে রওনা দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহুয়া মৈত্র অবশ্য সরাসরি রাজ্যপালকে নিশানা করে বলেন, ‘কলকাতায় এসে ভুক্তভোগী পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করুন। পাহাড়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা তো প্রশাসন করছে। রাজ্যপাল দার্জিলিঙে কেন?’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্যপালকে সম্মান জানাতেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে তাঁরা দার্জিলিং যাচ্ছেন।
এদিকে রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত ধরনা চালিয়ে যাবেন বলে আগেই ঘোষণা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে ধরনা মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘আপনি মনোনিত। আমরা নির্বাচিত। আকাশ-পাতাল তফাত। আপনি বলছেন, ঘেরাও নয়, ঘর আও। কার বাড়িতে যাব, উনি তো ঘরেই নেই। আমরা প্রয়োজনে কয়েকজনকে দার্জিলিং-এও পাঠাতে পারি। তাহলে অন্তত বাংলায় তো আসবেন হঠাৎ পালিয়ে গেলেন। উনি ই-মেল পাঠিয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় দেখা করতে চান। আমরা রাজ্যপালের পদকে সম্মান করি। বাংলাকে সম্মান করি।
বাংলার অধিকারের স্বার্থে লড়াই করছি বলে, ২-৩ জনকে কাল পাঠাব।’ এরপরই রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আপনার তো ৪ তারিখ রাতে কলকাতায় আসার কথা ছিল। দিল্লিতে কোনও কর্মসূচি নেই। হয়তো আজ অপেক্ষা করছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রায় কী হয়? মুখ থুবড়ে পড়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের শখ কেড়ে নিল। এত মানুষের চোখের জল, পার পাবেন না। সুপ্রিম কোর্টের রায় তারই প্রথম ধাপ। আর তারপরই শনিবার দলের তিন সদস্যকে পাহাড়ে পাঠায় তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে, এদিন রাজ্যপাল দার্জিলিঙে এলে সেখানে তাঁকে কালো পতাকা দেখায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।