পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে উঠে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাখিল করা ইডির বিরুদ্ধে মামলা। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনও লাভ পেলেন না। তিনি।
গত বুধবারের পর বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে তাঁকে ( অভিষেক) আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিল যে, -‘ ইডি যে যে নথি চেয়েছে তার সব তাদের কাছে জমা দিতে হবে’। এবং এর জন্য ৫ দিনের ‘ডেডলাইন’ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ইডি যা যা নথি চেয়েছিল, তা তাঁকে জমা দিতে হবে। আর সেই নথি জমা দিতে হবে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যেই।
কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, -‘ অভিষেককে একটি ঘণ্টাও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে না’। তবে একই সঙ্গে ইডিকে আদালত বলেছে, -‘নথিতে সন্তুষ্ট না হলে তারা আবার অভিষেককে ডেকে পাঠাতে পারবে’।কিন্তু তলব করার আগে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে অভিষেককে।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন অভিষেক। সেই মামলারই শুনানি চলে বৃহস্পতিবার। এদিন দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে শুনানি।
ডিভিশন বেঞ্চ জানায় , ”আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে অভিষেককে সব নথি ইডির কাছে দিতে হবে। কোনও নথি জমা দিতে না পারলে ইডির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু আদালত অভিষেককে এক ঘণ্টাও অতিরিক্ত সময় দেবে না। অভিষেকের জমা দেওয়া নথিতে সন্তুষ্ট না হলে তাঁকে হাজিরা দিতে বলতে পারে ইডি। তবে সমন পাঠাতে হলে পুজোর আগে অর্থাত্ ১৯ অক্টোবরের আগে বা পুজোর পরে অর্থাত্ ২৬ অক্টোবরের পরে পাঠাতে হবে।”
প্রসঙ্গত, অভিষেককে গত মঙ্গলবার ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। পরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিনহার একক বেঞ্চও বলেছিল মঙ্গলবার তদন্ত প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। অভিষেক অবশ্য নির্দিষ্ট দিনে শেষপর্যন্ত ইডির দফতরে যাননি। বদলে তিনি সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান। অভিষেক আদালতকে বলেছিলেন, -‘ সিঙ্গেল বেঞ্চ ওই নির্দেশ দিতে পারে না’।
বুধবার অভিষেকের সেই আবেদনের শুনানি হয় ডিভিশন বেঞ্চে। বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ না দিলেও একটি প্রস্তাব রাখে ইডির কাছে। পাশাপাশি, অভিষেক কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়। আদালত বলে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে ইডির মতামত কী, তা জানাতে হবে আদালতকে।
বৃহস্পতিবার ইডির বক্তব্য শোনার পরই মামলাটির শুনানি শেষ হয় ডিভিশন বেঞ্চে। গত বুধবার অভিষেকের আইনজীবীকে বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, ”আপনি (অভিষেক) তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করুন। যে নথি চাওয়া হয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য দেওয়া উচিত। ১২ অক্টোবর ইডির দফতরে সব নথি নিয়ে যান।”অন্য দিকে, ইডির আইনজীবীকে বিচারপতি প্রস্তাব দেন, ”যা যা নথি চাওয়া হয়েছে, তা দেওয়া হবে। তাতে সন্তুষ্ট না হলে তদন্তের প্রয়োজনে অভিষেককে তলব করতে পারবে ইডি। ১২ অক্টোবর অভিষেক নথি দেবেন ইডিকে।
সব নথি খতিয়ে দেখে পুজোর পরে নয় নতুন করে সমন পাঠাবে ইডি।”সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে অভিষেকের যুক্তি ছিল, -‘ সিঙ্গেল বেঞ্চ তাঁকে মামলায় না জুড়েই এমন নির্দেশ দিচ্ছে, যা সরাসরি তাঁর স্বার্থকে প্রভাবিত করবে’। অভিষেকের আইনজীবীর যুক্তি ছিল সিঙ্গল বেঞ্চ এটা করতে পারে না। কিন্তু অভিষেকের সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বরং পাল্টা যুক্তি দিয়ে বিচারপতি সেন বলেন, ”মাথায় রাখবেন, এটা কোনও সরাসরি তদন্ত নয়। কোর্টের নজিরদারিতে তদন্ত চলছে। তাই সিঙ্গল বেঞ্চ এটা করতে পারে।
তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থার কাছে জবাব চাইতেই পারে সিঙ্গল বেঞ্চ। এমনকি, কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চললে আদালত যদি তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হয়, তবে নতুন নির্দেশও দিতে পারেন বিচারপতি।” এই যুক্তিতেই ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি। বরং জানিয়ে দেয়, তারা সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার কথা এখনই ভাবছে না। এখন দেখার সুপ্রিম কোর্টে যান কিনা অভিষেক।