পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী জেলার এক আদিবাসী গ্রামে ২০ জুন, ১৯৯২-এ বনবিভাগ এবং পুলিশ আধিকারিকরা চন্দনকাঠের চোরাচালানকারীদের ধরতে অভিযান চালায়। তাদের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের উপর এবং ১৮ জন মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে সেশন কোর্টের রায়কে বহাল রেখে অভিযুক্তদের দোষীসাব্যস্ত করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এক ঐতিহাসিক রায়ে মাদ্রাজ হাইকোর্ট অভিযুক্তদের সব আবেদন খারিজ করে সেশন কোর্টের রায়ই বহাল রাখল। ধর্মপুরীর আদিবাসী গ্রাম বাচথিতে ১৯৯২ সালে চন্দনকাঠ চোরাচালানকারীদের ধরতে অভিযান চালানোর সময় আদিবাসী মহিলাদের উপর যৌন নিপীড়ন সহ অন্যান্য অত্যাচার চালানোর অভিযোগে ২১৫ জন (সকলেই বন, পুলিশ এবং রাজস্ব বিভাগের আধিকারিক) দোষী সাব্যস্ত করে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিচারপতি পি বেলমুরুগান তাঁর রায় দিতে গিয়ে জানান, ‘এই আদালত দেখেছে, নিপীড়িতা এবং প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য প্রমাণ দৃঢ়, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন তার সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে মামলাটি প্রমাণ করেছে।
২০ জুন, ১৯৯২ সালে আধিকারিকরা চন্দনকাঠ চোরাচালান ধরতে তল্লাশির সময় বাচথি গ্রামে অভিযান চালায়। তল্লাশির সময় সেখানে বিপুল পরিমাণ গবাদি পশু ধ্বংস করা হয় এবং ১৮ মহিলাকে ধর্ষণও করা হয়।
২০১১ সালে ধর্মপুরীর সেশন আদালত এই মামলায় ১২৬ জন বনকর্মীকে দোষীসাব্যস্ত করে। এদের মধ্যে ৪ জন বনকর্মী, ৮৪ পুলিশকর্মী এবং ৫ জন রাজস্ব বিভাগের আধিকারিক রয়েছেন। মোট ২৬৯ জন অভিযুক্তের ৫৪ জন মামলা চলাকালীনই মারা যায়, বাকি ২১৫ জনকে ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শেষন কোর্টের রায়কে বহাল রেখেই হাইকোর্ট সব অভিযুক্তকেই দ্রুত সাজার বাকি মেয়াদের জন্য অবিলম্বে সকল অপরাধীকে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি বেলমুরুগান তামিলনাড়ু সরকারকে নির্দেশ দেন ২০১৬-এর ডিভিশন বেঞ্চের আদেশ অনুসারে, ধর্ষণের শিকার প্রত্যেক মহিলাকে অবিলম্বে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং ক্ষতিপূরণের টাকার অর্ধেক টাকা দোষীসাব্যস্তদের কাছ থেকে নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৮ আদিবাসী মহিলার পরিবারের একজনকে চাকরি অথবা স্বরোজগার যোজনা প্রদানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চালানো তৎকালীন পুলিশ আধিকারিক (এসপি) এবং বনবিভাগের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বেলমুরুগান।
বিচারপতি বেলমুরুগান তাঁর রায়ে জানান, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে স্পষ্ট যে, জেলা কালেক্টর, বন আধিকারিক এবং এসপি সহ সব আধিকারিকরাই ঘটনায় আসল অপরাধী কারা জানতেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি উলটে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। আসল অপরাধীদের আড়াল করে তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন।’
উল্লেখ্য বাচথি ঘটনায় ১৯৯৫ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে যায়। এরপরই তৎকালীন মুখ্য বন আধিকারিক এম হরিকৃষ্ণাণ এবং অন্যান্য বর্ষীয়ান আধিকারিক সহ মোট ২৬৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল।