মুশারফ হোসেন, চাঁচল: সাধারণ পরিবারের অসাধারণ সাহসী বালক মোরসালিম। সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রের উপস্থিত বুদ্ধিতে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। শুক্রবার বিকালে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মালদার ভালুকারোড স্টেশনের এক কিলোমিটার দূরের ঘটনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ছোট্ট কিশোরের যাত্রীবাহী সুপারফাস্ট ট্রেনের কয়েকশো যাত্রীর জীবন বাঁচানোর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। যা দেখে রীতিমত স্তম্ভিত রেলকর্তারাও। দুরন্ত গতিতে আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ছুটে যাচ্ছিল। মালদা জেলার ভালুকা রোড স্টেশন পেরোতেই বিপত্তি অপেক্ষা করছিল ট্রেনটির জন্য। সেই সময় ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিল ১৩ বছরের এই কিশোর। সে হঠাৎ লক্ষ্য করে আপ-লাইনে বেশ কিছু অংশের মাটি সরে গেছে। তড়িঘড়ি নিজের পরনের লাল গেঞ্জি খুলে ট্রেনের ট্রাকে দাঁড়িয়ে সংকেত দিতে থাকে চালককে। লাল সংকেত দেখে চালক এমারজেন্সি ব্রেক কষে ট্রেনটি দাঁড় করান। আর বড়সড় বিপদ থেকে রক্ষা পায় এক্সপ্রেস ট্রেনটি। জীবন রক্ষা পায় ট্রেনের কয়েকশো যাত্রীর। এরপর রেলকর্মীরা ছুটে এসে আপ লাইন মেরামতি করেন। ট্রেনটি সুষ্ঠভাবে গন্তব্যে পৌঁছায়।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ আধিকারিক অভিষেক দে জানান, মোরসালিম যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তবে রেলের তরফে তাকে পুরস্কৃত করা হবে কিনা এব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে এই সাহসী বালকের সঙ্গে দেখা করতে যান সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তজমুল হোসেন। রাজ্যের তরফে মোরসালিমকে তার সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষাকারী সাহসী বালক মোরসালিম ওয়াহেদপুর জুনিয়র হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র। তার বাবা মুহাম্মদ ইসমাইল পরিযায়ী শ্রমিক। কড়িয়ালির ঝাঙর পাড়ায় তাঁর বাড়ি। ওই জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ভিক্টর ব্যানার্জী জানান, মোরসালিমের সাহসিকতায় তাঁরা গর্বিত। বিদ্যালয়ের তরফে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।
তবে রেলের এই গয়ংগচ্ছ মনোভাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, মোরসালিম হত দরিদ্র পরিবারের বালক। তার বাবা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে বাইরে আছেন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। নুন আন্তে পান্তা ফুরানো সংসার। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজকর্ম করতে হয় মোরসালিমকে। অভাবের সংসারে লড়াইয়ের সঙ্গী বালক মুরসালিম। জীবন জীবিকার ভার তারও কাঁধে। তাই প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে মাছ ধরতে গিয়েছিল বাড়ির পাশে রেল লাইন লাগোয়া বিলে। রেল লাইনের ধার দিয়ে যাচ্ছিল জালে মাছ পড়েছে কিনা দেখতে। হঠাৎ রেল লাইনে বিশাল গর্ত দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে। সে হঠাৎ দেখতে পায়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রেনটিও ওই লাইন বরাবর ছুটে আসছে। গায়ের লাল টি-শার্ট খুলে ট্রেনের চালককে ঈশারা করতে থাকে ট্রেন থামানোর জন্য। চালক ট্টেন দাঁড় করালে বালক চালককে রেললাইনের গর্ত দেখায়। তার ফলে বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। কিন্তু রেলওয়ে বিভাগ মোরসালিমের কোনও খবর রাখেনি ও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করেনি। এমনকি এমন সাহসী-চতুর ছেলের প্রশংসাও করেনি।
মোরসালিমের মা মারজিনা খাতুন বলছেন, আমি কিছু জানিনা। তার বাবা বাড়িতে নেই। শ্রমিকের কাজে বাইরে। শুনেছি আমার ছেলে নাকি ট্রেন দাঁড় করিয়েছিল। তা নিয়ে আমরা আতংকিত। কোনও ঝামেলা হলে কি করবো?
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তার কোন খোঁজ না নেওয়ায় অবশ্য মোরসালিমের কোন আক্ষেপ নেই। তার বক্তব্য, এতগুলো মানুষকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছি। এটাই আমার কাছে বড় পুরষ্কার।