পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: শান্তিপূর্ণ এলাকায় পোস্টিং নিতে চাননি, চেয়েছিলেন জঙ্গি অভিযানে সামনে থেকে লড়াই করতে। সেই লড়াইয়ের ময়দানেই জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন কম্যান্ডিং সেনা অফিসার কর্নেল মনপ্রীত সিং। রেখে গেলেন স্ত্রী, একটি ছয় বছরের ছেলে এবং একটি দুই বছরের মেয়েকে। পঞ্জাবের মোহালির মুল্লানপুরে কর্নেল মনপ্রীত সিংয়ের বাড়িতে শোকের ছায়া। বাবার শেষযাত্রায় তাঁকে স্যালুট দিয়ে সম্মান জানিয়ে বিদায় দিয়েছে তাঁর ৬ বছরের ছেলে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইতে জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে শহিদ হয়েছেন তিনজন নিরাপত্তা অফিসার। নিহতদের মধ্যে ভারতীয় সেনার এক কর্নেল পদাধীকারী, সেনার মেজর এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের এক সুপারিন্টেডেন্ট রয়েছেন। কাশ্মীরের অনন্তনাগের কোকেরনাগে এই ঘটনা ঘটে। এখনও নিখোঁজ একজন সেনা।
ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়, নিহত তিনজন আধিকারিকের মধ্যে ছিলেন কম্যান্ডিং অফিসার মনপ্রীত সিং। অপর দুই নিহতের নাম মেজর আশিস ধনচাক এবং পুলিশের ডেপুটি সুপার হিমায়ুন মুজামিল ভাট।
কম্যান্ডিং অফিসার মনপ্রীত সিং ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা। মনপ্রীত রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ১৯ তম ব্যাটেলিয়নের সেকেন্ড ইন-কমান্ড ছিলেন। তাঁর মেয়াদকালে তিনি সোনার পদক পেয়েছিলেন। ২০২১ সালে মনপ্রীত সিংয়ের কর্নেল পদে পদোন্নতি হয়, সেই সময় শান্তিপূর্ণ এলাকায় পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মনপ্রীত সিং জানিয়ে দেন, ”না স্যার,’ আমি আমার ১৯ তম রাষ্ট্রীয় রাইফেলসেই থাকতে চাই, আমার নিজের সঙ্গীদের সঙ্গে থাকতে চাই”।
কর্নেল সিং সর্বদা জঙ্গি অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন। কর্নেলের বক্তব্য ছিল, “আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আমার কমান্ডের অধীনে প্রত্যেকেই নিরাপদ।” শান্তিপূর্ণ এলাকায় পোস্টিংয়ের পরিবর্তে কর্নেল জীবনের পরোয়া না করে দুঃসাহসিক জঙ্গি অভিযানে অংশ নেন। মনপ্রীত সিং ১৯ তম রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের কমান্ডের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছিলেন। এই ব্যাটালিয়ন যা হিজবুল মুজাহিদিনের বুরহান ওয়ানি সহ জঙ্গিদের হত্যার কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। দক্ষিণ অনন্তনাগ, কোকারনাগ এবং ভেরিনাগ আচাবালের উচ্চতর সীমানা সহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল এই ব্যাটেলিয়নের কাঁধে। এই অঞ্চল দিয়েই অতীতে বিশেষ করে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটত।
সেনা আধিকারিক ছাড়াও কর্নেল মনপ্রীত সিং ছিলেন একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তিনি প্রতি সময় সেনা যুবকদের উন্নতিতে বিশ্বাস করতেন, খেলাধুলোয় উৎসাহ দিতেন। এমনকী মহিলাদের খেলাধুলোয় এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। অশান্ত এলাকা লারকিপোরাতে মহিলাদের ‘চিনার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’ এবং ভলিবল ইভেন্টগুলি প্রায়শই আয়োজন করতেন তিনি।
কর্নেল মনপ্রীত সিংয়ের অকালমৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় মানুষ। সবার মুখে একটাই কথা যুবকদের প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তিনি, সমাজ গঠনে তিনি অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন।
মহিলা ক্রিকেটার রুবাইয়া সৈয়দ জানিয়েছেন, কর্নেল মনপ্রীত সিং এক অন্য ধরনের মানুষ ছিলেন। সিং মনে করতেন সমাজ গঠনের জন্য খেলাধুলোর গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সমাজে। অনেক মাদকাসক্তদের তিনি পুনর্বাসনের জন্য পাঠিয়েছিলেন।