প্রদীপ মজুমদারঃ অসম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও কিছু রাজ্যে ৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাম চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। বলা হয়েছে, ‘ন্যাশনাল কমিশন অন এডিব্যাল অয়েল-পাম’ প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য খরচ করবে ১১–০৪০ কোটি টাকা। আপাতদৃষ্টিতে এই প্রকল্পকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করা হলেও এর ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছেন পরিবেশবিদ থেকে রাজনৈতিক নেতারাও।
‘কেন্দ্রের এই নয়া প্রকল্প উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভবিষ্যতে মরুভূমি হয়ে ওঠার সহায়ক হবে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। একইসঙ্গে বিপর্যয় ডেকে আনবে জীববৈচিত্র্যের উপর। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন– পাম তেলের গাছের ব্যাপক চাষ যে অঞ্চলে হয়– সেখানকার বর্ষা অরণ্যগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং জীববৈচিত্র্য অবশিষ্ট থাকে না। তাছাড়া ক্ষুদ্র চাষিদের জন্য এই চাষের কোনও সহায়ক ভূমিকা নেই। কারণ এরজন্য প্রচুর অর্থের যেমন প্রয়োজন– তেমন– রোজগার মিলতে লাগে বিপুল সময়। বিরোধী দলগুলি মনে করছে– উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতি প্রধান এলাকাগুলিকে পাম তেল চাষের নামে কর্পোরেট সেক্টরের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে একাধিক বহুজাতিক সংস্থার হাতছানি।
মেঘালয়ের সাংসদ আগাতা সাংমা ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, প্রায় তিন দশক আগে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্চে কেন্দ্র সরকার পাম চাষের জন্য একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই অঞ্চলে জৈববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ পামগাছের চাষাবাদের সময় এলাকার জৈববৈচিত্র্যের ওপর অসম্ভব পরিমাণ প্রভাব পড়ে।
হায়দরাবাদস্থিত ‘সেন্টার ফর সাবস্টেনেবল এগ্রিকালচার’-এর কৃষি বিজ্ঞানী জিবি রমন জানেউলুর এ এক গবেষণায় দেখিয়েছেন– একটি পাম তেলের গাছ ভূগর্ভ থেকে দৈনিক ৩০০ লিটার জল টেনে নেয়। অর্থাৎ পাম গাছে পার্শ্ববর্তী এলাকায় অন্য কোনও চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পাম তেলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ক্যানসারের জীবাণুও ছড়াতে পারে। ঠিক এই কারণেই– ‘ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি’ পাম তেলের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একইসঙ্গে পাম তেল চাষের সর্বনাশা ফলাফল দেখে শ্রীলঙ্কা চলতি বছরেরই মে মাসে পাম তেলের ক্ষেত ধ্বংস করার পাশাপাশি ওই তেল আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাম তেলের চাষে সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জৈববৈচিত্র্য লোপ পাবে বলে পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গোটা বিশ্ব যখন পাম তেলকে নিষিদ্ধ করছে– সেই সময় ভারতের কেন্দ্র সরকার এগারো হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ করে অসম-ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের ৯ লক্ষ হেক্টর জমিকে কী কারণে বাছাই করল তা নিয়ে ছড়িয়েছে বেশ চাঞ্চল্য।