কী থাকছে শিক্ষানীতিতে
— বাংলা এবং ইংরেজি পড়তেই হবে পড়ুয়াদের।
—তৃতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা, হিন্দি এবং সংস্কৃত
—ইউনিক আইডেন্টেটি কার্ড’
—গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষকতা করতে হবে শিক্ষকদের।
— চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়েছে রাজ্যে।
—উচ্চ মাধ্যমিকেও হবে সেমিস্টার পদ্ধতি। এমসিকিউ ধাঁচে হবে প্রশ্নপত্র।
— এ‘নই উঠছে না দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা
— প্রতিষ্ঠানে নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল কোর্স চালুর সুযোগ
পুবের কলম প্রতিবেদক: নয়া শিক্ষানীতি প্রকাশ করল রাজ্য শিক্ষা দফতর। এই শিক্ষানীতিতে স্কুল থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার সকালে স্কুল শিক্ষা দফতরের পোর্টালে রাজ্যের নয়া শিক্ষানীতি সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করা হল। ১৭৮ পাতার নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল বদল ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই শিক্ষানীতি। জাতীয় শিক্ষানীতির কিছু প্রস্তাব যেমন গ্রহণ করা হয়েছে, তেমনই নিজেদের তৈরি করা কমিটিতে আলোচনা করে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। শিক্ষাবিদদের নিয়ে তৈরি করা কমিটিতে সব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পরই রাজ্যের নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছে।
এক বছরের প্রি-প্রাইমারি ক্লাস এবং চার বছরের প্রাথমিকের ক্লাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর পর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসের কথা বলা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির শেষে থাকছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। অষ্টম শ্রেণি থেকেই ধাপে ধাপে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে চলেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যে সব পড়ুয়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে, তারা এই নিয়মের আওতায় পড়বে। সেমিস্টার পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করে প্রথম ফলাফল ঘোষণা হবে ২০২৬ সালে। দ্বাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার, যা নভেম্বরে হবে, তাতে এমসিকিউয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করার ভাবনা রয়েছে শিক্ষা সংসদের।
এই শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষাকে আরও গুরুত্ব দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইংরেজিকেও। শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলা এবং ইংরেজি পড়তেই হবে পড়ুয়াদের। তৃতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা, হিন্দি এবং সংস্কৃতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা পড়াতে হবে। সেই অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে। এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘পছন্দ’ মতো প্রথম ভাষা নিতে চাইলে, সেটাই পাবে। কলকাতায় কেউ প্রথম ভাষা বাংলা নিতে চাইলে, তা নিতে পারে।
সকল পড়ুয়ার জন্য একটি ‘ইউনিক আইডেন্টেটি কার্ড’ তৈরি করা হবে। ওই কার্ডের সঙ্গে থাকবে মেমোরি চিপ। তাতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পডুয়াদের পরীক্ষার ফলাফল নথিবদ্ধ করা থাকবে। রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে যেমন গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করা বাধ্যতামূলক, ঠিক তেমনই গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষকতা করতে হবে শিক্ষকদের। শিক্ষক নিয়োগের সময়ই এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য প্রমোশনের ভাবনাও রয়েছে সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিল তৃণমূল সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতিকে খামখেয়ালি বলে আখ্যা দিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। তবে জাতীয় শিক্ষানীতির কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করেছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়েছে রাজ্যে।
কেন্দ্রের শিক্ষানীতিতে গেরুয়াকরণের চেষ্টা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে নিজেরাই শিক্ষানীতি বানিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাতে নামমাত্র কেন্দ্রের সুপারিশ মানা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষাবিদরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তৈরি করেছেন বাকি অংশ। এদিন থেকেই এই শিক্ষানীতি লাগু হয়েছে।
নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তার পর এক বছরের প্রাক প্রাথমিক ও চার বছর প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের। এর পর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়াশুনো হবে সেমেস্টার পদ্ধতিতে। এই চার বছর বাংলা ও ইংরাজি ছাড়াও আরও একটি ভাষা পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের। নবম, দশম নিয়ে হবে মাধ্যমিক। তবে সেক্ষেত্রেও জারি থাকবে সেমেস্টার পদ্ধতি। এর পর একাদশ, দ্বাদশ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকও হবে সেমিস্টার পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে এমসিকিউ ধাঁচে হবে প্রশ্নপত্র। কেন্দ্রের শিক্ষানীতিতে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে তা মানেনি রাজ্য সরকার। দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করলে স্কুলে স্কুলে হবে গ্রাজুয়েশন সেরিমনি।
স্নাতকের ক্ষেত্রের শুধুমাত্র ৪ বছরের অনার্স কোর্সের সুপারিশ গ্রহণ করেছে রাজ্য। প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার যাবতীয় শিক্ষাগত অগ্রগতি বাংলার শিক্ষা পোর্টালের মাধ্যমে জমা থাকবে সরকারের কাছে। নতুন শিক্ষানীতিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠানে নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।